WBMDFC Scholarship: দরিদ্র ছাত্র ছাত্রীদের পড়াশোনার জন্য সরকার কত কীই না করে থাকেন! তাঁদের উচ্চ শিক্ষায় টাকার অভাব যাতে কখনো বাধা হয়ে না দাঁড়ায়, সে কারণে সরকার নানা রকম স্কলারশিপের ব্যবস্থা করে থাকেন। রাজ্য সরকার ঘোষিত এমন বহু স্কলারশিপ ইতিমধ্যে অসংখ্য ছাত্র ছাত্রীকে সাহায্য প্রদান করেছে।
এমনই এক বিশেষ স্কলারশিপ হল WBMDFC স্কলারশিপ। যদিও কোনও একটি স্কলারশিপ নয় এটি। অনেকগুলি স্কলারশিপ নিয়েই এই স্কলারশিপ গঠিত। আজকের প্রতিবেদনে আমরা জানব, কোন কোন স্কলারশিপ রয়েছে এই স্কলারশিপের অন্তর্ভুক্ত, এই স্কলারশিপের সুবিধা, আবেদনের যোগ্যতা ও আবেদন পদ্ধতি সম্পর্কে।
WBMDFC স্কলারশিপ কী (What is WBMDFC স্কলারশিপ)
রাজ্যের যে সকল ছাত্র ছাত্রী গ্রামে থাকে অথচ পড়াশোনায় মেধাবী তাঁদের জন্য এক বিশেষ উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। সেই সকল ছাত্র ছাত্রীরা যাতে সুস্থ ভাবে লেখা পড়া চালিয়ে যেতে পারে, সে কারণে Bengal Minorities Development and Finance Corporation একটি স্কিম চালু করেছেন যার নাম WBMDFC Scholarship।
মুসলমান, খ্রিস্টান, বৌদ্ধ, পার্সিয়ান ইত্যাদি যেকোনো ধর্মের শিক্ষার্থী এই স্কলারশিপে আবেদন জানাতে পারবে। স্কুল শিক্ষার্থী অথবা স্নাতক এবং স্নাতকোত্তরের পড়ুয়ারা উচ্চ শিক্ষার জন্য তাঁদের সুবিধামত স্কলারশিপে আবেদন জানাতে পারবে।
WBMDFC স্কলারশিপের উদ্দেশ্য (Objectives of WBMDFC Scholarship)
সরকার যে সকল স্কলারশিপ চালু করেন তার প্রত্যেকটিরই নিজের মত কিছু উদ্যেশ্য আছে।WBMDFC স্কলারশিপেরও স্বাভাবিক ভাবে এমন কিছু উদ্দেশ্য আছে যা অর্থনৈতিক ভাবে পিছিয়ে পড়া ছাত্র ছাত্রীদের সাহায্য করে। এখন সেই উদ্দেশ্যগুলি সম্পর্কেই আমরা এবার জানব।
- পশ্চিমবঙ্গে এখনো অনেক পরিবার আছে যাঁরা আর্থিক ভাবে পিছিয়ে আছেন। সেই সকল পরিবারের মেধাবী শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার জন্য সহায়তা করা WBMDFC স্কলারশিপের অন্যতম মূল উদ্দেশ্য।
- টাকার অভাবে পড়াশুনা করতে না পেরে মাঝ পথে অনেকেই পড়াশোনা চেটে দেন। তাই কোনো শিক্ষার্থীকে যাতে টাকার অভাবে পড়াশোনা না ছাড়তে হয় সেই দিকে খেয়াল রাখে এই স্কলারশিপ।
- দরিদ্র হলেও, সঠিক ও সুস্থ ভাবে পড়াশোনা করে যাতে প্রত্যেকটি ছেলে মেয়ে নিজের স্বপ্ন পূরণ করতে পারে, তার দায়িত্ব এই স্কলারশিপের।
WBMDFC স্কলারশিপের সুবিধা (Benefits of WBMDFC Scholarship)
এই প্রতিবেদনে এবার আপনাদের সঙ্গে আলোচনা করে নেব এই স্কলারশিপের সুবিধাগুলি নিয়ে।
- দরিদ্র পরিবারের মেধাবী শিক্ষার্থীদের পড়াশুনার প্রতি আগ্রহী করে তোলে।
- মুসলমান, খ্রিস্টান, বৌদ্ধ, পার্সিয়ানসহ যেকোনো ধর্মের শিক্ষার্থীরা এই স্কলারশিপে আবেদন জানাতে পারবে।
- এই বৃত্তি ভারতে শিক্ষার হার যেমন বৃদ্ধি করে তেমনি স্কুল-ছুট শিক্ষার্থীর সংখ্যা কমিয়ে আনে।
- এই বৃত্তি ভারতের GDP বৃদ্ধি করে।
- এই স্কলারশিপ গ্রহণের ফলে শিক্ষার্থীরা ইচ্ছা মত উচ্চ শিক্ষা গ্রহণ করতে পারে।
WBMDFC স্কলারশিপে আবেদনের যোগ্যতা (Criteria of WBMDFC Scholarship )
আগেই বলা হয়েছে, WBMDFC স্কলারশিপ কোনও নির্দিষ্ট একটি স্কলারশিপ নয়। এই স্কলারশিপের অধীনে রয়েছে বেশ কিছু স্কলারশিপ, যেগুলি থেকে বাছাই করে শিক্ষার্থীরা তাঁদের দরকার মত আবেদন করতে পারে। এবার আপনাদের সেই স্কলারশিপগুলির নাম এবং সেই স্কলারশিপে আবেদনের যোগ্যতা সম্পর্কে জানানো হবে।
- West Bengal Pre-matric Scheme – এই স্কলারশিপে আবেদন করার জন্য শিক্ষার্থীর পারিবারিক আয় হতে হবে বার্ষিক আড়াই লাখের কম। উচ্চমাধ্যমিকে ছাত্র বা ছাত্রীকে ৭৫© নম্বরের অধিকারী হতে হবে। তাঁকে একটি নামকরা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী হতে হবে।
- West Bengal Post Matric Scheme – এই স্কলারশিপে আবেদনের জন্য সাম্প্রতিক পরীক্ষায় ৫০% নম্বর থাকতে হবে শিক্ষার্থীকে। এক্ষেত্রে পারিবারিক আয় হতে হবে 2 লক্ষের কম। ছাত্র বা ছাত্রীকে অবশ্যই পশ্চিমবঙ্গের বাসিন্দা হতে হবে, নাহলে এই স্কলারশিপে আবেদন করা যাবে না।
- Swami Vivekananda Merit Cum Means Scholarship for Minorities- যেসকল গ্রামের শিক্ষার্থীর পারিবারিক উপার্জন 98,000 এর বেশি নয় এবং যেসকল শহরের শিক্ষার্থীর পারিবারিক উপার্জন ১, ২০,০০০ টাকার বেশি নয়, তাঁরা এই স্কলারশিপে আবেদন জানাতে পারবে। দেশের মধ্যে উচ্চ শিক্ষা লাভ করতে চাইলে তাঁরা পাবে কুড়ি লক্ষ টাকা, এবং দেশের বাইরে উচ্চ শিক্ষা লাভ করতে চাইলে তাঁরা পাবে 30 লক্ষ টাকা। শিক্ষার্থীদের বয়স সীমা অবশ্যিই ১৬-৩২ এর মধ্যে হতে হবে।
- West Bengal Talent Support Stipend – এই ক্ষেত্রে সর্বশেষ পরীক্ষায় 50% নম্বর পেতে হবে এবং অবশ্যই Phd পর্যন্ত পড়াশুনা চালিয়ে যেতে হবে, তবেই এই স্কলারশিপ শিক্ষার্থীর উপযুক্ত হবে। পারিবারিক উপার্জন দুই লাখের কম হতে হবে।
- West Bengal Minority Women Empowerment Programme – একজন শিশুকে শিক্ষিত করতে হলে, হাল ধরতে হবে মা’কেও। তাই পশ্চিমবঙ্গের দরিদ্র পরিবারের নারীরাও যাতে পিছিয়ে না থাকেন, তাঁদের কথা ভেবে এই স্কলারশিপটি চালু করেছে সরকার। প্রতিটি দরিদ্র ঘরের নারী যাতে নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারে, যাতে সঠিক উপায়ে উপার্জন করতে পারে সেই ব্যবস্থা করা হয়েছে। তাঁদের অর্থনৈতিক উন্নতির কথা ভেবে 3% সুদে 15000 টাকা পর্যন্ত ঋণ দেওয়া হয়। পরিশোধের সময় দেওয়া হয় দের বছর থেকে দু বছরের মধ্যে। পৌরসভা অফিস বা ব্লক অফিস থেকে সারা বছরই এই স্কলারশিপের জন্য আবেদন করতে পারা যায়।
WBMDFC স্কলারশিপে আবেদন জানানোর জন্য প্রয়োজনীয় নথি (Documents Required for application under WBMDFC)
- সংখ্যালঘু শংসাপত্র (Minority Certificate)
- পরীক্ষার মার্কশিট
- পারিবারিক বার্ষিক আয়ের সার্টিফিকেট
- পশ্চিমবঙ্গের স্থায়ী বসবাসের সার্টিফিকেট
- আধার কার্ডের ফটোকপি
- অ্যাকাউন্ট নম্বর/আইএফএসসি কোড সহ ব্যাঙ্ক কপি
- সাম্প্রতিক পাসপোর্ট সাইজের ছবি
WBMDFC স্কলারশিপে আবেদন জানানোর পদ্ধতি (How to apply on WBMDFC Scholarship)

সর্বশেষে আপনাদের এই প্রতিবেদনে জানানো হচ্ছে, কী ভাবে এই স্কলারশিপে আবেদন জানানো যায়। চলুন, দেখে নেওয়া যাক।
- প্রথমে wbmdfcscholarship.in ওয়েবসাইটিতে যেতে হবে।
- এরপর “Student’s Panel” এ ক্লিক করুন।
- এরপর “Fresh Registration” এ ক্লিক কর…
- আপনার স্ক্রিনে একটি নতুন পেজ আসবে সেখানে আপনার জেলা নির্বাচন করুন।
- এরপর আপনার যাবতীয় ব্যক্তিগত তথ্য দিয়ে এপ্লিকেশন গরম ফিলাপ করুন।
- ফর্ম ফিলাপ হয়ে গেলে “Submit and Proceed” এ ক্লিক কর।
WBMDFC স্কলারশিপের কিছু গুরুত্বপূর্ণ লিঙ্ক:
WBMDFC স্কলারশিপের অফিসিয়াল ওয়েবসাইট লিঙ্ক | এখানে ক্লিক করুন |
WBMDFC স্কলারশিপের রেজিস্ট্রেশন করার লিঙ্ক | এখানে ক্লিক করুন |
WBMDFC স্কলারশিপের আবেদন করার পদ্ধতি ডাউনলোড করার লিঙ্ক | এখানে ক্লিক করুন |
WBMDFC স্কলারশিপের আবেদনের স্ট্যাটাস চেক করার লিঙ্ক | এখানে ক্লিক করুন |
WBMDFC স্কলারশিপ রিনিউ করার লিঙ্ক | এখানে ক্লিক করুন |
WBMDFC স্কলারশিপ উপসংহার:WBMDFC স্কলারশিপ(West Bengal Minority Development and Finance Corporation Scholarship) হল পশ্চিমবঙ্গ সরকারের একটি প্রশংসনীয় উদ্যোগ, যা সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মেধাবী ও আর্থিকভাবে পিছিয়ে পড়া ছাত্রছাত্রীদের উচ্চশিক্ষায় উৎসাহিত করে। এই স্কলারশিপ শিক্ষার্থীদের শুধুমাত্র অর্থনৈতিক সহায়তা প্রদান করে না, বরং তাদের আত্মবিশ্বাস বাড়িয়ে দেয় এবং ভবিষ্যতের জন্য প্রস্তুত হতে সাহায্য করে। যারা স্বপ্ন দেখে উচ্চশিক্ষার, কিন্তু অর্থনৈতিক প্রতিবন্ধকতা তাদের পথে বাধা হয়ে দাঁড়ায়—WBMDFC স্কলারশিপ তাদের জন্য আশার আলো। এই স্কলারশিপের সুযোগ গ্রহণ করে অনেক শিক্ষার্থী আজ নিজেদের জীবন গঠন করছে এবং সমাজে গৌরবজনক ভূমিকা পালন করছে।শিক্ষা হচ্ছে উন্নতির চাবিকাঠি, আর WBMDFC স্কলারশিপ সেই চাবিকাঠি তুলে দেয় তাদের হাতে, যাদের কাছে তা পৌঁছানো কঠিন। এটি প্রমাণ করে যে, প্রতিভা কখনও অর্থের অভাবে থেমে থাকতে পারে না যদি সঠিক সহায়তা মেলে। সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের শিক্ষার্থীদের স্বপ্ন পূরণে এই স্কলারশিপ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এর মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা কেবল নিজের ভবিষ্যৎ গড়ে তোলে না, বরং সমাজকেও এগিয়ে নিয়ে যায়।