বিদ্যাঞ্জলী স্কলারশিপ: এই স্কলারশিপে আবেদন করলেই পেতে পারেন ১ কোটি টাকা দেখে নিন কীভাবে করবেন আবেদন, জানুন বিস্তারিত

Vidyanjali Scholarship: এখনো আমাদের দেশে বেশিরভাগ ছাত্র ছাত্রীই পর্যাপ্ত অর্থের অভাবের জন্য উচ্চ শিক্ষা লাভ করতে পারে না। বলা বাহুল্য, বেশিরভাগ দরিদ্র পরিবারের পড়ুয়াকেই বই ছেড়ে খুব ছোট বয়স থেকে ধরতে হয় সংসারের হাল। এর ফলে মেধাবী হলেও, তাঁরা না পায় যথাযথ লেখাপড়ার সময়, না করতে পারে তাঁদের স্বপ্ন পূরণ।

সে কারণেই দেশের ভবিষ্যতের কথা ভেবে, সরকার বিভিন্ন সময় আর্থিক সহায়তা প্রদান করার জন্য নানা রকম স্কিম চালু করে থাকেন। দরিদ্র পরিবারের ছাত্র ছাত্রীদের যাতে পড়াশুনার ক্ষেত্রে আর্থিক অভাব কোনও ভাবেই বাধা না হয়, সে কারণে সরকার ‘বিদ্যাঞ্জলী স্কলারশিপ’ (Vidyanjali Scholarship) নামে একটি বিশেষ উদ্যোগ নিয়েছেন। আজকে আমাদের এই প্রতিবেদনে থাকবে বিদ্যাঞ্জলী স্কলারশিপের উদ্দেশ্য, সুবিধা এবং আবেদন করার পদ্ধতি সম্পর্কিত নানা ধরনের গুরুত্বপুর্ন তথ্য।

বিদ্যাঞ্জলী স্কলারশিপ কী? (What is Vidyanjali Scholarship)

দেশের অর্থনৈতিক ভাবে পিছিয়ে পড়া মেধাবী ছাত্রছাত্রীদের জন্য দেশের শিক্ষামন্ত্রী ধর্মেন্দ্র প্রধান (Dharmendra Pradhan) একটি বিশেষ উদ্যোগ নিয়েছেন। এই প্রকল্পটির নাম ‘বিদ্যাঞ্জলী স্কলারশিপ’ (Vidyanjali Scholarship)।

এখনো দেশের বিভিন্ন প্রান্তে সঠিক ভাবে শিক্ষার আলো পৌঁছয়নি। বিভিন্ন দরিদ্র পরিবারে মেধাবী ছাত্র ছাত্রী থাকলেও, পড়াশোনার খরচ বহন করবার মত তাঁদের সামর্থ নেই। তাই মাঝ পথে তাঁদের স্বপ্ন যাতে ভেঙে না যায় সে কারণে শিক্ষামন্ত্রী এই বিশেষ স্কলারশিপের ব্যবস্থা করেছেন। নির্দিষ্ট যোগ্যতা অনুযায়ী, খুব সহজভাবেই এই স্কলারশিপের ওয়েবসাইটে গিয়ে ছাত্র ছাত্রীরা আবেদন জানাতে পারবে।

বিদ্যাঞ্জলী স্কলারশিপের উদ্দেশ্য (Objectives of Vidyanjali Scholarship)

সমাজের প্রান্তিক মানুষদের নানারকম অসহায়তার কথা ভেবে সরকার বিভিন্ন রকম প্রকল্প প্রণয়ন করে থাকেন। সকল প্রকল্পেরই নানা রকমের উদ্দেশ্য থাকে। এখন আমরা আলোচনা করব বিদ্যঞ্জলী স্কলারশিপের উদ্দেশ্য নিয়ে, না নিম্নরূপ।

  • আর্থিক সহায়তা প্রদান – দেশের যে সকল শিক্ষার্থী অর্থের অভাবে তাঁদের লেখাপড়া চালিয়ে যেতে পারে না, এই স্কলারশিপ তাঁদের কাছে আশীর্বাদ। এই স্কলারশিপ যোগ্যতা অনুযায়ী দরিদ্র পরিবারের অন্তর্গত মেধাবী শিক্ষার্থীদের বৃত্তি প্রদান করে থাকে, যার ফলে তাঁদের পড়াশোনার জন্য খরচ বহন করতে কোনও প্রকার সমস্যা হয় না।
  • শিক্ষার হার বৃদ্ধি – দেশে যাতে শিক্ষা এবং শিক্ষিত মানুষের হার বৃদ্ধি পায়, দেশ যাতে আরো উন্নতি করে, সেই দিকে দেখা এই প্রকল্পের অন্যতম মূল উদ্দেশ্য।
  • শিক্ষার্থীদের উৎসাহ প্রদান – বেশিরভাগ দরিদ্র পরিবারের ছাত্র ছাত্রীরা ইচ্ছা থাকলেও অর্থের অভাবে মাঝ পথেই তাঁদের লেখাপড়া থামিয়ে দেয়। এমনটা যাতে না হয়, তাঁরা যাতে পর্যাপ্ত অর্থের সাহায্যে তাঁদের লেখাপড়া চালিয়ে যেতে পারে, সেই দিকে বিশেষ নজর দিয়ে থাকে এই স্কলারশিপ।
  • শিক্ষার সুযোগ বৃদ্ধি – টাকার অভাবে যাতে শিক্ষার্থীরা সঠিক শিক্ষা লাভ থেকে বঞ্চিত না হয়, তাঁদের সুবিধা মত যাতে তাঁরা যে কোনো প্রতিষ্ঠান থেকে যথাযথ শিক্ষা লাভ করতে পারে, বিদ্যাঞ্জলী স্কলারশিপ সেই ক্ষেত্রে বিশেষ সহায়তা করে।
  • সামগ্রিক উন্নতি- পর্যাপ্ত শিক্ষা অর্জন করলে যাতে শিক্ষার্থী তাঁদের ব্যক্তিগত ইচ্ছা পূরণের সঙ্গে সমাজের উন্নতির দিকেও সহায়তা করে, তার জন্য এই স্কলারশিপ বিশেষ ভূমিকা পালন করে।

বিদ্যাঞ্জলী স্কলারশিপের সুবিধা (Benefits of Vidyanjali Scholarship)

বিদ্যাঞ্জলী স্কলারশিপের ওয়েবসাইট অনুযায়ী, এই ওয়েবসাইট থেকে যে সকল সুবিধা শিক্ষার্থীরা পেয়ে থাকে, তা নীচে উল্লেখ করা হল,

  • উচ্চ শিক্ষার সুযোগ – স্নাতক বা স্নাতকোত্তর পর্যায়ে শুধু নয়, এই স্কলারশিপে অন্তর্ভুক্ত ছাত্র ছাত্রীরা IIT, NIT এর মত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে তাঁদের উচ্চ শিক্ষা বহাল রাখতে পারবে।
  • অনুদান প্রদান – এই স্কলারশিপে প্রায় 70 জন মত শিক্ষার্থীকে, পাঁচ কোটি টাকা মত বৃত্তি প্রদান করা হয়ে থাকে।
  • আর্থিক সাহায্য – বিদ্যাঞ্জলী স্কলারশিপের অন্তর্গত মেধাবী শিক্ষার্থীদের এই স্কলারশিপের বৃত্তি, সরাসরি তাঁদের ব্যাংক একাউন্টে পাঠিয়ে দেওয়া হয়।
  • আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধি – পড়াশোনার পথে যে আর্থিক অভাব কোনও বাধা নয়, যোগ্যতা থাকলে যে কোনো শিক্ষার্থীই যে তাঁদের স্বপ্ন পূরণ করতে পারবে, সেই ভরসা দেয় বিদ্যাঞ্জলী স্কলারশিপ। পরিবারের দায়িত্ব নিতে মাঝ পথে পড়াশোনা না ছেড়ে দিয়ে, এ ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীরা নিজেদের স্বপ্ন পূরণ করতে এগিয়ে যায়। বলাই যায়, এই স্কলারশিপ সকল শিক্ষার্থীর মধ্যে আত্মবিশ্বাস গড়ে তোলে।
  • উজ্জ্বল ভবিষ্যত – এই স্কলারশিপের সহায়তার ফলে শিক্ষার্থীরা উচ্চ শিক্ষা লাভ করতে পারে এবং তাঁদের উজ্জ্বল ভবিষ্যত গড়ে তুলতে সফল হয়।

বিদ্যাঞ্জলী স্কলারশিপে আবেদনের যোগ্যতা (Eligibility to apply for Vidyanjali Scholarship)

এখন প্রশ্ন হচ্ছে, শি স্কলারশিপে আবেদন করতে গেলে ছাত্র ছাত্রীদের কী কী যোগ্যতা থাকতে হবে। এই স্কলারশিপের ওয়েবসাইটে সেই সম্পর্কিত গুরুত্বপুর্ন তথ্য পাওয়া গেছে, যা নিচে দেওয়া হল।

  • শিক্ষার্থীকে অবশ্যই ভারতের স্থায়ী নাগরিক হতে হবে
  • তাঁকে অবশ্যই দরিদ্র সীমার অন্তর্ভুক্ত হতে হবে
  • প্রার্থীকে অবশ্যই IIT বা NIT এর মত নামী প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হতে হবে
  • আবেদনকারীকে দশম এবং দ্বাদশ শ্রেণিতে অত্যন্ত ভালো নম্বরের বা গ্রেডের অধিকারী হতে হবে

বিদ্যাঞ্জলী স্কলারশিপে আবেদনের জন্য প্রয়োজনীয় নথি (Documents required for application under Vidyanjali Scholarship)

এই স্কলারশিপে আবেদনের জন্য বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ নথি প্রয়োজন। সেগুলি নিম্নরূপ

  1. পারিবারিক উপার্জনের সার্টিফিকেট
  2. আধার কার্ড ও পাসপোর্ট সাইজের ছবি
  3. কাস্ট সার্টিফিকেট
  4. শিক্ষাগত যোগ্যতার শংসাপত্র
  5. ব্যাংক একাউন্ট ডিটেল

বিদ্যাঞ্জলী স্কলারশিপে আবেদন করার পদ্ধতি (How to apply on Vidyanjali Scholarship)

এই স্কলারশিপের ওয়েবসাইটে গেলেই আপনি সহজেই আবেদন করতে পারবেন আপনার স্কলারশিপের জন্য। আবেদন করার পদ্ধতি হল,

  1. অনলাইনে আবেদনের জন্য অবশ্যই বিদ্যাঞ্জলী ওয়েবসাইটতিতে যেতে হবে।
  2. এরপর আপনার স্ক্রিনে হোম পেজটি এলে, সেখানে “Apply Online” অপশনে ক্লিক করতে হবে
  3. এর ফলে অ্যাপলিকেশন ফর্মটি খুলবে এবং সেখানে আপনাকে যাবতীয় বিবরণ দিতে হবে
  4. ফর্ম ফিল আপ হলে “Submit” অপশনে ক্লিক করতে হবে
  5. স্কলারশিপ সম্পর্কিত কোনো প্রশ্ন থাকতে যোগাযোগ করতে পারেন নিম্নোক্ত ঠিকানায়,
    Helpline Number: 011-23765602
    Email: pmuvidyanjali@gmail.com

বিদ্যাঞ্জলী স্কলারশিপের কিছু গুরুত্বপূর্ণ লিঙ্ক:

বিদ্যাঞ্জলী স্কলারশিপের অফিসিয়াল ওয়েবসাইট লিঙ্ক

বিদ্যাঞ্জলী স্কলারশিপের আবেদন করার লিঙ্ক

উপসংহার :

বিদ্যাঞ্জলি স্কলারশিপ(Vidyanjali Scholarship) হলো ভারত সরকারের একটি শিক্ষাবৃত্তি কর্মসূচি যা শিক্ষা মন্ত্রকের অধীনে পরিচালিত হয়। এটি বিদ্যাঞ্জলি যোজনার একটি অংশ যার মূল লক্ষ্য হল দেশের দরিদ্র ও পিছিয়ে পড়া ছাত্রছাত্রীদের মানসম্মত শিক্ষা এবং প্রয়োজনীয় সহায়তা দেওয়া।

এই স্কলারশিপের মূল উদ্দেশ্য হলো সমাজে সকলে যেন শিক্ষায় অবদান রাখতে পারে সেই প্ল্যাটফর্ম তৈরি করে দরিদ্র ও মেধাবী ছাত্র-ছাত্রীদের উচ্চশিক্ষার সুযোগ করে দেওয়া। এখনো দেশের বিভিন্ন প্রান্তে সঠিক ভাবে শিক্ষার আলো পৌঁছয়নি। বিভিন্ন দরিদ্র পরিবারে মেধাবী ছাত্র ছাত্রী থাকলেও, পড়াশোনার খরচ বহন করবার মত তাঁদের সামর্থ থাকে না তাই মাঝ পথে তাঁদের স্বপ্ন যাতে ভেঙে না যায় সে কারণে শিক্ষামন্ত্রী এই বিশেষ স্কলারশিপের উদ্যোগ নিয়েছে।

বিদ্যাঞ্জলী স্কলারশিপ ভরসার ভিত তৈরী করে চলছে যেমন উচ্চশিক্ষার পথে অথনৈতিক সংকট বাঁধা হয়ে দাঁড়ায় না, যোগ্যতা এবং প্রতিভা ও প্রবল ইচ্ছা থাকলে যে কেউ সহজেই স্বপ্ন পূরণ করতে পারবে এই আশ্বাসে বিশ্বাসী করে তোলে দরিদ্র্য শিক্ষার্থীদের।

Leave a Comment