পশ্চিমবঙ্গে বহু মেধাবী ছাত্র-ছাত্রী রয়েছে। তাদের মধ্যে অনেকেই উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করতে চায়। কিন্তু এই পথে বেশিরভাগ সময় বাধা হয়ে দাঁড়ায় আর্থিক অনটন। অর্থের দিক থেকে জোর না থাকলে নিজের পছন্দ মতো কোর্সে ভর্তি হতে পারেনা বহু ছাত্র-ছাত্রী। এই সমস্যা সমাধান করতে পশ্চিমবঙ্গ সরকার কর্তৃক একাধিক স্কলারশিপের ব্যবস্থা করা হয়েছে। তবে এই প্রতিবেদনে আমরা কথা বলব স্বামী বিবেকানন্দ স্কলারশিপের (Swami Vivekanand merit Cummins Scholarship) সম্পর্কে।
এই স্কলারশিপ পশ্চিমবঙ্গ সরকার দ্বারা ছাত্র-ছাত্রীদের উচ্চশিক্ষার আশা পূরণ করতে চালু করা হয়েছে। আপনারা জানলে অবাক হবেন পশ্চিমবঙ্গের 21 শতাংশ পরিবার আজও দরিদ্র সীমার নিচে বসবাস করছেন। এইসব পরিবারের কাছে পড়াশোনা বিলাসিতার সমান। অল্প বয়সে যাতে মেধাবী ছাত্র-ছাত্রীদের পড়াশোনা বন্ধ না হয়ে যায়, তাই মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি এই স্কলারশিপের ব্যবস্থা করেছেন। স্বামী বিবেকানন্দ স্কলারশিপ কী? কীভাবে আবেদন করা যাবে এই স্কলারশিপে? কারা আবেদন করতে পারবে এই স্কলারশিপে? আবেদন করার সময় কী কী ডকুমেন্ট লাগবে? এই ধরনের বেশ কিছু প্রশ্নের উত্তর থাকবে আমাদের আজকের প্রতিবেদনটিতে।
স্বামী বিবেকানন্দ স্কলারশিপ (Swami Vivekanand merit Cummins Scholarship) কী?
পশ্চিমবঙ্গের মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির উদ্যোগে চালু হয়েছে এই স্বামী বিবেকানন্দ স্কলারশিপ। নিম্নবিত্ত, মধ্যবিত্ত ও আর্থিকভাবে পিছিয়ে পড়া শ্রেণীর ছাত্র-ছাত্রীরা যাতে টাকা পয়সার অভাবে মাঝপথেই পড়াশোনা থেকে বঞ্চিত না হয় তাই এই স্কলারশিপের সূচনা। স্বামী বিবেকানন্দ স্কলারশিপই হল বিকাশ ভবন স্কলারশিপ।
স্বামী বিবেকানন্দ স্কলারশিপে (Swami Vivekanand merit Cummins Scholarship) আবেদন করার যোগ্যতা :-
এই স্কলারশিপে আবেদন করার জন্য কয়েকটি শর্ত রয়েছে। মাধ্যমিক পরীক্ষার পরেই এই স্কলারশিপে আবেদন করা যায়। স্নাতকোত্তর স্তরেও আপনারা আবেদন করতে পারবেন। স্বামী বিবেকানন্দ স্কলারশিপে আবেদন করার শর্তাবলী-
১. আবেদনকারী ছাত্রছাত্রীকে পশ্চিমবঙ্গের স্থায়ী বাসিন্দা হতে হবে।
২. এই স্কলারশিপে আবেদন করার জন্য আবেদনকারীকে ন্যূনতম 60 শতাংশ মার্কস পেতে হবে। এর থেকে কম মার্কস পেলে স্বামী বিবেকানন্দ স্কলারশিপে আবেদন করা যাবে না।
৩. পশ্চিমবঙ্গ সরকারের সাহায্যপ্রাপ্ত সরকারি স্কুল অথবা সম্পূর্ণ সরকারি স্কুলে পাঠরত পড়ুয়ারাই এই স্কলারশিপে আবেদন করতে পারবে। পশ্চিমবঙ্গে অবস্থিত উচ্চশিক্ষা সংসদের সহায়তা সম্পন্ন প্রতিষ্ঠান, কলেজ অথবা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হলে তবেই এই স্কলারশিপের আবেদন করা যাবে।
৪. আবেদনকারী পড়ুয়ার পরিবারের বার্ষিক আয় 2 লাখ 50 হাজার টাকার মধ্যে হতে হবে। এর বেশি হলে সেই পড়ুয়া স্বামী বিবেকানন্দ স্কলারশিপে আবেদন করতে পারবে না।
কোন্ কোন্ কোর্সের ক্ষেত্রে স্বামী বিবেকানন্দ স্কলারশিপ (Swami Vivekanand merit Cummins Scholarship) পাওয়া যায়?
নির্দিষ্ট কয়েকটি কোর্সে ভর্তি হলে আপনারা এই স্কলারশিপে আবেদন করতে পারবেন। যথা :-
১. ফার্মেসি কোর্স
২. প্যারামেডিকেল কোর্স
৩. বি.এড, ডি.এল.এড
৪. AICTE-র অধীনে ইঞ্জিনিয়ারিং
৫. এমবিবিএস, বিডিএস ও ডিপ্লোমা জাতীয় মেডিকেল কোর্স
৬. বি.এ, বি.এসসি, বি.কম
৭. পোস্ট গ্রেজুয়েশন
এছাড়া মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের ছাত্রছাত্রীরা এই স্কলারশিপের জন্য আবেদন করতে পারবে। পাশাপাশি পিএইচডি যাঁরা করছেন তাঁরাও এই স্কলারশিপে আবেদন করতে পারবেন।
স্বামী বিবেকানন্দ স্কলারশিপে (Swami Vivekanand merit Cummins Scholarship) আবেদন করলে কত টাকা বৃত্তি পাওয়া যায়?
মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের ছাত্র-ছাত্রীরা এই স্কলারশিপ থেকে বছরে 12 হাজার টাকা বৃত্তি পেয়ে থাকে। বি.এ আর বি.কম বিভাগের ছাত্র-ছাত্রীরাও বছরে 12 হাজার টাকায় বৃত্তি পায়। তবে বি.এসসি পাঠরত ছাত্রছাত্রীরা খানিকটা বেশি বৃত্তি পেয়ে থাকে। তারা বছরে 18 হাজার টাকা মতো স্কলারশিপ পায়।
বিসিএ বা বিবিএ নিয়ে পড়লেও বছরে 18 হাজার টাকা মতোই স্কলারশিপ পাওয়া যায়। বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠরত ছাত্র-ছাত্রীরা (কলা বিভাগ ও বাণিজ্য বিভাগ) 24 হাজার টাকা স্কলারশিপ পায়। বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্রছাত্রীরা পায় 30 হাজার টাকা। ফার্মেসি কোর্স, মেডিকেল কোর্স আর নার্সিং কোর্সের ক্ষেত্রে 60 হাজার টাকা পাওয়া যায়। পলিটেকনিক কোর্সে 18 হাজার টাকা করে দেওয়া হয়।
স্বামী বিবেকানন্দ স্কলারশিপে (Swami Vivekanand merit Cummins Scholarship) আবেদন করতে কী কী নথিপত্র লাগে?
এই স্কলারশিপে আবেদন করার জন্য বেশকিছু নথিপত্র তথা ডকুমেন্টের প্রয়োজন হয়। তাই আবেদন করার সময় অবশ্যই এই সমস্ত ডকুমেন্ট নিজের কাছে রাখবেন। যেগুলি হল-
- একটি বৈধ ইমেইল আইডি ও ফোন নম্বর। এতেই আপনারা স্কলারশিপ সংক্রান্ত নোটিফিকেশন পাবেন।
- যে কোর্সে বা ক্লাসে ভর্তি হয়েছেন তার পেমেন্ট স্লিপ।
- পরিচয় পত্র হিসেবে আপনার আধার কার্ড লাগবে।
- আবেদনকারীর নিজস্ব ব্যাংক একাউন্টের পাসবুক। অবশ্যই মাথায় রাখবেন এক্ষেত্রে বাবা অথবা মায়ের অ্যাকাউন্ট নম্বর দিলে হবে না। আবেদনকারীর নিজস্ব ব্যাংক একাউন্ট থাকতে হবে। তাই স্কলারশিপের আবেদন করার আগে নিজের নামে ব্যাংক একাউন্ট খোলা আবশ্যক।
- রঙিন পাসপোর্ট সাইজের ফটো।
- আবেদনকারীর স্বাক্ষর। এটি একটি পৃষ্ঠায় করে আপলোড করতে হবে।
- পরিবারের বার্ষিক ইনকামের সার্টিফিকেট।
স্বামী বিবেকানন্দ স্কলারশিপে (Swami Vivekanand merit Cummins Scholarship) আবেদনের প্রক্রিয়া :-
এই স্কলারশিপে কেবলমাত্র অনলাইন মারফত আবেদন করা যায়। তাই আপনাদের অফলাইনে কোনো অফিসে গিয়ে আবেদনপত্র জমা করতে হবে না।
- স্বামী বিবেকানন্দ স্কলারশিপের (Swami Vivekanand merit Cummins Scholarship) অফিশিয়াল ওয়েবসাইটে গিয়ে সবার প্রথমে আপনাদের রেজিস্ট্রেশন করতে হবে। এর জন্য একটি বৈধ ফোন নাম্বার ও ইমেইল আইডি লাগবে। তারপর আপনাদের অ্যাপ্লিকেশন আইডি দেওয়া হবে।
- এরপর আইডি, পাসওয়ার্ড ও ক্যাপচা নথিভুক্ত করার মাধ্যমে ওয়েবসাইটে লগইন করতে হবে।
- তারপর আপনাদের সামনে একটি ফরম আসবে। সেটি সঠিকভাবে অনলাইনে ফিল আপ করতে হবে।
- ফরম পূরণের পর প্রয়োজনীয় নথিপত্র স্ক্যান করে আপলোড করতে হবে। নিজের স্বাক্ষর স্ক্যান করে আপলোড করতে ভুলবেন না।
- এরপর সমস্ত তথ্য ঠিকভাবে পূরণ করেছেন কিনা সেটি দেখার জন্য একটি পেজ খুলবে।
- এখানে অবশ্যই ভালো করে প্রত্যেকটি তথ্য যাচাই করে নেবেন। যদি মনে হয় কোন কিছু ভুল হয়েছে তাহলে এডিট করবেন। তারপর পুনরায় যাচাই করে সাবমিট বাটনে ক্লিক করলেই আপনার আবেদনপত্রটি কর্তৃপক্ষের কাছে চলে যাবে।
স্বামী বিবেকানন্দ স্কলারশিপ অর্থাৎ মেরিট কাম মিন্স স্কলারশিপ (Swami Vivekanand merit Cummins Scholarship) আর্থিকভাবে পিছিয়ে পড়া মেধাবী ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য বর স্বরূপ। ছাত্র-ছাত্রীরা উচ্চশিক্ষায় এই স্কলারশিপের কারণে বেশ সাহায্য পেয়ে থাকে। ২০১৬ সালে এই স্কলারশিপ পুনর্গঠন করা হয়। এর ফলে বর্তমানে আরও বেশি সংখ্যক ছাত্র-ছাত্রী স্বামী বিবেকানন্দ স্কলারশিপের সুবিধা নিতে পারছে। আর আগের তুলনায় বৃত্তির পরিমাণও বৃদ্ধি পেয়েছে।
নবান্ন স্কলারশিপের কিছু গুরুত্বপূর্ণ লিঙ্ক:
নবান্ন স্কলারশিপের অফিসিয়াল ওয়েবসাইট লিঙ্ক | Click Here |
নবান্ন স্কলারশিপের স্ট্যাটাস চেক করার লিঙ্ক | Click Here |
নবান্ন স্কলারশিপের আবেদন রিনিউ করার লিঙ্ক | Click Here |
স্বামী বিবেকানন্দ স্কলারশিপ সম্পর্কিত কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন:-
১) স্বামী বিবেকানন্দ স্কলারশিপ কোন্ রাজ্যে উপলব্ধ?
এই স্কলারশিপ পশ্চিমবঙ্গের ছাত্রছাত্রীদের জন্য উপলব্ধ।
২) কত সালে এই স্কলারশিপ পুনর্গঠন করা হয়?
২০১৬ সালে।
৩) এই স্কলারশিপে আবেদন করার জন্য পারিবারিক বার্ষিক আয় কত হতে হবে?
স্বামী বিবেকানন্দ মেরিট কাম মিন্স স্কলারশিপে আবেদন করার জন্য পরিবারের বার্ষিক আয় 2.50 লাখ টাকার মধ্যে হতে হবে।
৪) এই স্কলারশিপে কত টাকা বৃত্তি পাওয়া যায়?
বিভিন্ন কোর্সের ওপর আর্থিক অনুদানের পরিমাণ নির্ভর করে। তবে ন্যূনতম 12 হাজার টাকা ছাত্রছাত্রীরা পেয়ে থাকে।