Priyamvada Birla Scholarship : আজকাল পড়াশোনার খরচ নেহাত কম নয়। সেই খরচ সামলাতে রীতিমতো হিমশিম খেয়ে যেতে হয় বাবা মায়েদের। পরিবারের বোঝা কমাতে পড়াশুনার মাঝখানেই পড়াশুনা ছেড়ে আসতে হয় ছাত্র-ছাত্রীদেরই। আর এই সব ছাত্র ছাত্রীদের ক্ষেত্রে নিজের পড়াশোনাকে সামলে টাকা রোজগার করা খুবই মুশকিল। তাই এই সব ছাত্রছাত্রীদের পড়াশুনার সময় মুশকিল আসান হয়ে আসে এই ধরনের বিভিন্ন স্কলারশিপের মাধ্যমে।
তাই আজকের এই আরর্টিকেলটিতে আমরা আলচনা করব একটি খুবি জনপ্রিয় স্কলারশিপ সম্বন্ধে। এছাড়াও পশ্চিমবঙ্গে এমন অনেক স্কলারশিপ রয়েছে যেগুলি সম্পর্কে বেশিরভাগ ছাত্রছাত্রীরা জানেই না। আমার চেষ্টা করছি সেই সমস্ত স্কলারশিপের খবর তাদের কাছে পৌঁছানোর। আজকের প্রতিবেদনে আমরা প্রিয়ম্বদা বিরলা স্কলারশিপ (Priyamvada Birla Scholarship)-এর সম্পর্কে কথা বলব।
পশ্চিমবঙ্গের ছাত্রছাত্রীদের আর্থিক সহায়তা প্রদানের লক্ষ্যে এই স্কলারশিপের সূচনা। এমপি বিরলা চ্যারিটেবল ট্রাস্টের তরফ থেকে এই স্কলারশিপ চালু করা হয়েছে। এই স্কলারশিপের মারফত তোমরা ২৪ হাজার টাকা মতো আর্থিক সহায়তা পাবে। ফলে পড়াশোনার জন্য আর চিন্তা করতে হবে না তোমাদের।
কারা আবেদন করতে পারবে প্রিয়ম্বদা বিরলা স্কলারশিপএ? কিভাবে আবেদন করতে হবে? আবেদন করার সময় কী কী ডকুমেন্ট লাগবে? এই ধরনের সব প্রশ্নের উত্তর জেনে নাও আজকের প্রতিবেদনে।
প্রিয়ম্বদা বিরলা স্কলারশিপ (Priyamvada Birla Scholarship) কী?
সম্প্রতি এম পি বিরলা চ্যারেটেবল ট্রাস্টের তরফ থেকে একটি নতুন স্কলারশিপ চালু করা হয়েছে। স্কলারশিপটির নাম হল- প্রিয়ম্বদা বিরলা স্কলারশিপ। এটি মূলত পশ্চিমবঙ্গের ছাত্রছাত্রীদের জন্য ডিজাইন করা হয়েছে। যে সমস্ত ছাত্র-ছাত্রীরা পড়াশোনায় ভালো কিন্তু আর্থিকভাবে পিছিয়ে থাকার কারণে পড়াশোনায় সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে, তারা এই স্কলারশিপের জন্য আবেদন করতে পারবে।
এই স্কলারশিপের দৌলতে তোমরা পড়াশোনা শিখে স্বাবলম্বী হতে পারবে। প্রিয়ম্বদা বিরলা স্কলারশিপ (Priyamvada Birla Scholarship)-এ আবেদন করলে ২৪ হাজার টাকা মতো বৃত্তি পাওয়া যাবে। যারা স্নাতক স্তরে ভর্তি হয়েছো বা ভর্তি হবে তারা এই স্কলারশিপের জন্য আবেদন করতে পারবেন।
প্রিয়ম্বদা বিরলা স্কলারশিপ কেন গুরুত্বপূর্ণ ?
Why is the Priyamvada Birla Scholarship important?
- আর্থিক সহায়তা প্রদান- এই স্কলারশিপ শিক্ষার্থীদের উচ্চশিক্ষার বিভিন্ন খরচ যেমন টিউশন ফি, বই, হোস্টেল ইত্যাদি বহন করতে সাহায্য করে।
- মেধাবী শিক্ষার্থীদের উৎসাহ প্রদান- যারা ভালো রেজাল্ট করে কিন্তু আর্থিক সমস্যার কারণে পিছিয়ে পড়ে, তাদের জন্য এই স্কলারশিপ এক অনুপ্রেরণার মতো কাজ করে।
- সমাজে শিক্ষা বিস্তারে ভূমিকা- এই স্কলারশিপ নিম্ন-মধ্যবিত্ত পরিবারের শিক্ষার্থীদের উচ্চশিক্ষার সুযোগ করে দিয়ে সামাজিক ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করে।
- স্বপ্নপূরণের পথ তৈরি- এই স্কলারশিপ শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ গঠনে সহায়ক ভূমিকা পালন করে, বিশেষত যে সমস্ত শিক্ষার্থীর এক সফল ক্যারিয়ার তৈরি করার লক্ষ্য রয়েছে।
- আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধি করে- যে সমস্ত শিক্ষার্থী আর্থিক সংকটের কারণে উচ্চশিক্ষা চালিয়ে নিয়ে যেতে পারত না তাদের ক্ষেত্রে আর্থিক চাপ কমলে শিক্ষার্থীরা পড়াশোনায় আরও মনোযোগী হয়ে ওঠে যা তাদের আত্মবিশ্বাস ও সাফল্যের পথ উন্মুক্ত করে।
- অসামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও গুণমানসম্পন্ন শিক্ষা লাভের সুযোগ- এই স্কলারশিপের মাধ্যমে অর্থনৈতিক সীমাবদ্ধতার কারণে পিছিয়ে পড়া ছাত্রছাত্রীরা ভালো মানের শিক্ষা গ্রহণ করতে পারে, কারণ এই স্কলারশিপের মাধ্যমে উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে কলেজের ফি থেকে শুরু করে সমস্ত খরচা বহন করে কোম্পানি এবং এই স্কলারশিপের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা ভালো রেজাল্ট করলে ভারতের বিভিন্ন শীর্ষস্থানীয় কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ পেয়ে থাকে।
- স্বনির্ভরতা ও কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করে- এই স্কলারশিপের মাধ্যমে আর্থিকভাবে পিছিয়ে পড়া ছাত্রছাত্রীরা সফলভাবে উচ্চশিক্ষা শেষ করে এবং এবং পড়াশোনার পরে যথাযত জ্ঞান অর্জন করে শিক্ষার্থীরা নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারে ও কর্মজীবনে প্রবেশ করতে পারে।
প্রিয়ম্বদা বিরলা স্কলারশিপ (Priyamvada Birla Scholarship)-এ আবেদনের যোগ্যতা :-
প্রতিটি স্কলারশিপের নিজস্ব কিছু নিয়মাবলী রয়েছে। ঠিক তেমনভাবে প্রিয়ম্বদা বিরলা স্কলারশিপ এও রয়েছে। এই স্কলারশিপে আবেদন করতে গেলে তোমাদের কিছু শর্ত মানতে হবে। সেগুলি পূরণ হলেই আবেদন করতে পারবে এই দুর্দান্ত স্কলারশিপে। সেগুলি হলো –
এই স্কলারশিপে আবেদন করার জন্য আবেদনকারীকে অবশ্যই পশ্চিমবঙ্গের স্থায়ী বাসিন্দা হতে হবে।
আবেদনকারীকে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় সফলভাবে উত্তীর্ণ হতে হবে।
উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করার পর তাকে যেকোনো স্নাতক স্তরে অর্থাৎ বি.এ, বি.এসসি, বি.কম, বিবিএ, বিসিএ, এলএলবি, বি.টেক, বিডিএস ও এমবিবিএস-এর মতো কোর্সে ভর্তি হতে হবে।
আবেদনকারীর বয়স ২৫ বছরের মধ্যে হতে হবে।
এম পি বিরলা চ্যারেটেবল ট্রাস্টের অন্য কোনো স্কলারশিপের লাভ নিয়ে থাকলে, তা অবশ্যই উল্লেখ করে দিতে হবে।
অন্য কোনো সংস্থায় কাজ করলে হবে না।
প্রিয়ম্বদা বিরলা স্কলারশিপ (Priyamvada Birla Scholarship)-এ আবেদনের জন্য প্রয়োজনীয় নথিপত্র :-
এই স্কলারশিপে আবেদনের জন্য বেশ কিছু নথিপত্র তথা ডকুমেন্ট লাগবে, সেগুলি হলো –
পরিচয় পত্র হিসেবে আধার কার্ডের ফটোকপি।
বয়সের প্রমাণপত্র হিসেবে বার্থ সার্টিফিকেটের ফটোকপি।
মাধ্যমিকের মার্কশিট।
উচ্চ মাধ্যমিকের মার্কশিট।
উচ্চ মাধ্যমিকের রেজিস্ট্রেশন সার্টিফিকেট।
ভোটার আইডি কার্ডের ফটোকপি।
আবেদনকারীর পাসপোর্ট সাইজের রঙিন ছবি।
প্রিয়ম্বদা বিরলা স্কলারশিপ (Priyamvada Birla Scholarship)-এ আবেদন করলে কত টাকা পাবে ছাত্র-ছাত্রীরা ?
এই স্কলারশিপ তাদেরকেই দেওয়া হবে যাদের কোর্সের সময়সীমা সর্বাধিক চার বছর। এছাড়া প্রতি সেমিস্টারে তাদের সফলভাবে উত্তীর্ণ হতে হবে। শুধুমাত্র পাস করলেই হবে না ভালো মার্কসও পেতে হবে আবেদনকারীদের। তবেই রিনিউ হবে প্রিয়ম্বদা বিরলা স্কলারশিপ। এই স্কলারশিপে আবেদন করলে তোমরা প্রতিবছর কোর্স ফী ও হোস্টেল ফী বাবদ ২৪ হাজার টাকা পেয়ে যাবে।
প্রিয়ম্বদা বিরলা স্কলারশিপ (Priyamvada Birla Scholarship)-এ আবেদনের পদ্ধতি :-
এই স্কলারশিপে অনলাইন মারফত আবেদন করা যাবে। তার জন্য সাউথ পয়েন্ট স্কুলের অফিশিয়াল ওয়েবসাইট থেকে প্রিয়ম্বদা বিরলা স্কলারশিপ এর পেজে ভিজিট করতে হবে।
এরপর এপ্লিকেশন ফর্মে ক্লিক করতে হবে। তোমাদের সামনে একটি নতুন পেজ খুলে যাবে। সেখানে নাম, বৈধ ফোন নম্বর ও ইমেইল আইডি দিয়ে রেজিস্টার করতে হবে।
এরপর পাসওয়ার্ড ও ইউজার আইডি ব্যবহার করে পুনরায় লগ ইন করতে হবে।
তারপর এপ্লিকেশন ফর্মে তোমাদের সমস্ত তথ্য সঠিকভাবে ফিল আপ করতে হবে।
এত দূর হয়ে যাওয়ার পর একবার ফর্মটি দেখে নেবে। সমস্ত কিছু ঠিক থাকলে প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস স্ক্যান করে আপলোড করে দেবে। তারপরে সাবমিট অপশনে ক্লিক করলেই তোমাদের ফর্ম জমা পড়ে যাবে।
যোগাযোগ :-
ফোন নম্বর – 2440 5115 / 4043 / 5042
ইমেইল আইডি – pbs@southpoint.org.in
প্রিয়ম্বদা বিরলা স্কলারশিপ স্কিমের কিছু গুরুত্বপূর্ণ লিঙ্ক:
প্রিয়ম্বদা বিরলা স্কলারশিপ স্কিমের অফিসিয়াল ওয়েবসাইট লিঙ্ক
প্রিয়ম্বদা বিরলা স্কলারশিপের আবেদন পত্রের লিঙ্ক
প্রিয়ম্বদা বিরলা স্কলারশিপ সম্পর্কিত কিছু গুরুত্বপুর্ন প্রশ্ন:-
প্রিয়ম্বদা বিরলা স্কলারশিপ (Priyamvada Birla Scholarship)-এ কি ভারতের যে কোনো প্রান্ত থেকে আবেদন করা যাবে?
না। এই স্কলারশিপ শুধুমাত্র পশ্চিমবঙ্গের ছাত্র ছাত্রীদের জন্য ডিজাইন করা হয়েছে। তাই পশ্চিমবঙ্গের স্থায়ী বাসিন্দা হলে তবেই এই স্কলারশিপের আবেদন করা যাবে।
প্রিয়ম্বদা বিরলা স্কলারশিপ (Priyamvada Birla Scholarship) কোন্ সংস্থার তরফ থেকে দেওয়া হয়?
এই স্কলারশিপ এমপি বিরলা চেরিটেবল ট্রাস্টের তরফ থেকে দেওয়া হয়ে থাকে।
অফলাইনে কি প্রিয়ম্বদা বিরলা স্কলারশিপ (Priyamvada Birla Scholarship)-এ আবেদন করা যাবে?
না। কেবলমাত্র অনলাইন মারফত এই স্কলারশিপে আবেদন করা সম্ভব।
প্রিয়ম্বদা বিরলা স্কলারশিপ (Priyamvada Birla Scholarship)-এ আবেদন করলে কত টাকা বৃত্তি পাওয়া যাবে?
এই স্কলারশিপে আবেদন করলে ২৪ হাজার টাকার মতো বৃদ্ধি পাওয়া যাবে।
উপসংহার :
প্রিয়ম্বদা বিরলা স্কলারশিপ(Priyamvada Birla Scholarship) MP Brila Group এর তরফ থেকে স্বর্গীয় শ্রীমতি প্রিয়ম্বদা বিরলা স্মৃতির উদ্দেশ্যে এই স্কলারশিপ টি প্রদান করা হয়ে থাকে। এই স্কলারশিপের একমাত্র লক্ষ্য হলো আমাদের রাজ্যের শিক্ষার্থীদের স্নাতক পর্যায়ের পড়াশোনায় আর্থিক সহায়তা প্রদান করা।
এই স্কলারশিপ স্নাতক পাঠক্রমের জন্যে প্রতিবছর নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ প্রদান করে থাকে। আমাদের রাজ্যের মেধাবী শিক্ষার্থীদের অর্থনৈতিক সংকটের কারণে স্বপ্নপূরণ হবে না এই ভেবে আর হাল ছেড়ে দিতে হয় না কারন এই স্কলারশিপ আমাদের রাজ্য পশ্চিমবঙ্গের মেধাবী ও প্রতিশ্রুতিশীল ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য এক অভিনব সুযোগ।
এই স্কলারশিপ মেধাবী শিক্ষার্থীদের শিক্ষার পথকে আরো সহজ করে তোলে। তাই এই স্কলারশিপের জনপ্রিয়তা ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং এই স্কলারশিপ এর মাধ্যমে রাজ্যের শিক্ষার্থীরা উপকৃত হয়ে চলেছে।