PM Yashasvi Scholarship: একবিংশ শতাব্দীতে দাঁড়িয়েও এমন বহু পরিবার রয়েছে যেখানে পড়াশোনা বিলাসিতার সমান। আসলে তাদের আর্থিক অবস্থাটাই এমন যে, সন্তানকে পড়াশোনা শেখানোর বদলে দুবেলা দুমুঠো খাওয়ার জোগাড় করা খাবার জরুরী। কিন্তু অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থানের পাশাপাশি শিক্ষাটাও মানুষের জীবনের অপরিহার্য অঙ্গ। ভারতে বহু মেধাবী ছাত্র-ছাত্রী রয়েছে। কিন্তু তাদের ইচ্ছে থাকলেও উচ্চশিক্ষা লাভের আসা পূরণ হয় না। এই পথে তাদের সব থেকে বড় বাধা হয়ে দাঁড়ায় অর্থ। তবে স্কলারশিপ পেলে এই সমস্যা অনেকটাই কম হয়। আজ আমরা আপনাদের এমনই একটি স্কলারশিপ এর ব্যাপারে বলব।
ভারতবর্ষে বহু মানুষ দরিদ্র সীমার নিচে বসবাস করছে। তাই আর্থিকভাবে পিছিয়ে পড়া মানুষজনের পক্ষে সন্তানের উচ্চশিক্ষার খরচ বহন করা খুবই কষ্টসাধ্য। সরকারের পক্ষ থেকে প্রতিবছর মেধাবী ছাত্র-ছাত্রীদের স্কলারশিপ দেওয়া হয়ে থাকে। কিন্তু সব স্কলারশিপের সম্পর্কে ছাত্রছাত্রীরা জানতে পারেনা। এমনই একটি স্কলারশিপ হল প্রধানমন্ত্রী যশস্বী স্কলারশিপ বা PM Yashasvi Scholarship। কীভাবে আবেদন করবেন এই স্কলারশিপে? কী কী ডকুমেন্ট জমা করতে হবে? কারা আবেদন করতে পারবে প্রধানমন্ত্রী যশস্বী স্কলারশিপে? জেনে নিন আজকের প্রতিবেদনে।
প্রধানমন্ত্রী যশস্বী স্কলারশিপ বা PM Yashasvi Scholarship কী?
পিএম ইয়াং অ্যাচিভার্স স্কলারশিপ অ্যাওয়ার্ড কিম ভাইব্রেন্ট ইন্ডিয়া অর্থাৎ প্রধানমন্ত্রী যশস্বী স্কলারশিপ (PM Yashasvi Scholarship) আর্থিকভাবে পিছিয়ে পড়া শ্রেণীর ছাত্র-ছাত্রীদের অর্থনৈতিক ভাবে সাহায্য করার জন্য ডিজাইন করা হয়েছে। এই স্কলারশিপের সুবিধা ওবিসি, ইবিসি আর ডিএনটি বিভাগের মেধাবী ছাত্রছাত্রীরা পাবে।
এই স্কলারশিপের দৌলতে ছাত্র-ছাত্রীরা বার্ষিক 1.75 লাখ টাকা পর্যন্ত বৃত্তি পেতে পারে। যে কারণে তাদের পড়াশোনার খরচ অনেকটাই লাঘব করা সম্ভব হবে। এই টাকা ব্যবহার করে তোমরা আগামী দিনে কৌশলগত শিক্ষা তথা পেশাদারী শিক্ষা লাভ করতে পারবে। যা তোমাদের ভবিষ্যতের জন্য খুব কার্যকরী হবে। ন্যাশনাল টেস্টিং এজেন্সি দ্বারা এই স্কলারশিপটি পরিচালনা করা হয়।
প্রধানমন্ত্রী যশস্বী স্কলারশিপ বা PM Yashasvi Scholarship-এ আবেদন করার জন্য প্রয়োজনীয় নথিপত্র :-
এই স্কলারশিপে আবেদন করার জন্য কিছু নথিপত্র তথা ডকুমেন্টের প্রয়োজন হয়, সেগুলি হল-
- পরিচয় পত্র হিসেবে আধার কার্ড।
- আবেদনকারীর পাসপোর্ট সাইজের রঙিন ছবি।
- ব্যাংক একাউন্টের বিবরণ দেওয়ার জন্য ফেসবুকের প্রথম পৃষ্ঠার জেরক্স।
- আবাসিক শংসাপত্র।
- জাতিগত শংসাপত্র।
- অক্ষমতা শংসাপত্র থাকলে সেটি।
- ভর্তির প্রমান।
- শিক্ষাগত যোগ্যতার প্রমাণ স্বরূপ মার্কশিট ও সার্টিফিকেট।
- পরিবারের বার্ষিক আয়ের বৈধ শংসাপত্র।
- ভর্তির মানি রিসিট।
প্রধানমন্ত্রী যশস্বী স্কলারশিপ বা PM Yashasvi Scholarship-এ কত টাকা পাওয়া যাবে?
এই স্কলারশিপে আবেদন করার পর যোগ্য ওবিসি, ইবিসি শিক্ষার্থীরা বৃত্তি পেয়ে থাকে। মাসিক খরচ হিসেবে প্রত্যেক মাসে শিক্ষার্থীদের 3 হাজার টাকা করে দেওয়া হয়। এছাড়া বই ও ষ্টেশনারী খরচ বাবদ প্রত্যেক বছর শিক্ষার্থীদের 5 হাজার টাকা করে দেওয়া হয়। পাশাপাশি ইউপিএস অফ প্রিন্টারের মত প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি কিনতে এককালীন 45 হাজার টাকার সহায়তা প্রদান করা হয়।
নবম শ্রেণীর শিক্ষার্থীরা বার্ষিক 75 হাজার টাকা করে পায়। অপরদিকে একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থীরা প্রধানমন্ত্রী যশস্বী স্কলারশিপ বা PM Yashasvi Scholarship-এর দরুণ বার্ষিক 1 লাখ 25 হাজার টাকা পর্যন্ত পেতে পারে।
শিক্ষার্থী পরবর্তী ক্লাসে ভর্তি হওয়ার পরেই স্কলারশিপের টাকা তার একাউন্টে ঢুকে। টিউশন ফি সহ বিভিন্ন বেনিফিট কেন্দ্রীয় সরকার মারফত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। এছাড়া মাসিক খরচ সহ বই ও স্টেশনারি ইত্যাদির খরচ সরাসরি ছাত্রের একাউন্টে ট্রান্সফার করা হয়।
কারা প্রধানমন্ত্রী যশস্বী স্কলারশিপ বা PM Yashasvi Scholarship-এ আবেদন করতে পারবে?
যে কোন স্কলারশিপে আবেদন করার জন্য যোগ্যতার মানদন্ডে উত্তীর্ণ হতে হয়। অন্যান্য স্কলারশিপের মত এতেও নির্দিষ্ট যোগ্যতার মানদন্ড রয়েছে। এগুলি পূরণ করতে পারলে তবেই আবেদনকারী যোগ্যপ্রার্থী হিসেবে বিবেচিত হবে। প্রধানমন্ত্রী যশস্বী স্কলারশিপ বা PM Yashasvi Scholarship-এ আবেদন করার যোগ্যতা –
- এই স্কলারশিপে কেবলমাত্র ভারতবর্ষের স্থায়ী বাসিন্দারা আবেদন করতে পারবে।
- আবেদনকারীর পরিবারের বার্ষিক আয় 2.5 লাখ টাকার মধ্যে হতে হবে।
- ওবিসি, ইবিসি আর ডিএনটি শিক্ষার্থীরা এই স্কলারশিপের জন্য আবেদন করতে পারবে।
- ফুল টাইম কোর্সে ভর্তি হলে তবেই মিলবে এই স্কলারশিপের সুবিধা।
- শিক্ষার্থীর পরবর্তী সেমিস্টারে বা পরীক্ষার উত্তীর্ণ না হলে স্কলারশিপ পাবেনা।
- এই স্কলারশিপে ওবিসি বিভাগের শিক্ষার্থীরা অগ্রাধিকার পাবে।
- যদি বরাদ্দকৃত স্লটের থেকে যোগ্য শিক্ষার্থীদের সংখ্যা বেশি হয়, তাহলে আন্তঃরাজ্য মেধা তালিকার শীর্ষে স্থান করে নেওয়া শিক্ষার্থীরা এই স্কলারশিপের সুবিধা পাবে।
- যদি কোন কারনে দুটি শিক্ষার্থীর মধ্যে টাই হয়, তবে যেই শিক্ষার্থীর পরিবারের বার্ষিক আয় কম হবে সে তালিকায় জায়গা করে নেবে।
প্রধানমন্ত্রী যশস্বী স্কলারশিপ বা PM Yashasvi Scholarship-এ আবেদন করার পদ্ধতি :-
- সবার প্রথমে এনএসপি-র অফিসিয়াল ওয়েবসাইট খুলতে হবে। এরপর সেখানে নিজের নাম নথিভুক্ত করতে রেজিস্ট্রেশন করতে হবে।
- তবে তার আগে সমস্ত নির্দেশিকা ভালোভাবে পড়ে নিতে হবে। এরপর চেকবক্সে ক্লিক করতে হবে।
- তারপর যে ও সমস্ত তথ্য চাইবে সেগুলি পূরণ করতে হবে।
- রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়া সম্পন্ন হওয়ার পর পুনরায় এনএসপি-র অফিসিয়াল ওয়েবসাইট খুলতে হবে। আর ফ্রেশ এপ্লিকেশন কর্নার থেকে আবেদন করতে হবে।
- রেজিস্ট্রেশন করার সময় আপনাকে যে অ্যাপ্লিকেশন আইডি ও পাসওয়ার্ড দেওয়া হয়েছে সেটি ব্যবহার করে এবার লগইন করতে হবে।
- তারপর আপনার সামনে চলে আসবে আবেদনপত্র। সেটি ভালোভাবে পড়ে নিয়ে সঠিক তথ্যসহ পূরণ করতে হবে।
- এরপর প্রয়োজনীয় নথি তথা ডকুমেন্ট স্ক্যান করে আপলোড করতে হবে।
- এরপর পুনরায় আবেদনপত্রটি দেখে নেবেন। কোন ভুল না থাকলে সাবমিট অপশনে ক্লিক করবে।
আবেদনকারীদের জানিয়ে রাখি, ভর্তির পরীক্ষার রেজাল্টের মাধ্যমে এই স্কলারশিপের তালিকায় নিজেদের নাম যোগ্য বলে বিবেচিত করা হয়। প্রতিটি কোর্সের ক্ষেত্রে এই নিয়ম বাধ্যতামূলক। তবে রিনিউয়াল করার সময় শিক্ষার্থীর কোর্সের পরবর্তী সেমিস্টার অথবা বার্ষিক পরীক্ষার মার্কস গুরুত্বপূর্ণ। সেসব পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলে তবে এর রিনিউয়াল সম্ভব। কম্পিউটার অথবা ল্যাপটপ কেনার পর বিল জমা করতে হবে। তাহলেই এই আনুষাঙ্গিক আর্থিক সহায়তা কেন্দ্র সরকার কর্তৃক প্রদান করা হবে।
প্রধানমন্ত্রী যশস্বী স্কলারশিপের কিছু গুরুত্বপূর্ণ লিঙ্ক:
প্রধানমন্ত্রী যশস্বী স্কলারশিপের অফিসিয়াল ওয়েবসাইট লিঙ্ক | Click Here |
প্রধানমন্ত্রী যশস্বী স্কলারশিপে আবেদন করার লিঙ্ক | Click Here |