ন্যাশনাল স্কলারশিপ: মেধাবী ছাত্র-ছাত্রীদের প্রতিবছর 2 লক্ষ টাকা স্কলারশিপ দিচ্ছে কেন্দ্র সরকার

Aindrila Dhani
National Scholarship Portal

ভারতবর্ষে মেধার কোনও কমতি নেই। কিন্তু গোল বাঁধে অর্থের জায়গায় গিয়ে। আসলে অনেক পরিবারেই লক্ষ্মী আর সরস্বতী একসাথে বিরাজ করতে পারেন না। আর এই কারণে বহু মেধাবী ছাত্র-ছাত্রী নিজের উচ্চশিক্ষা লাভের আশা পূরণ করতে পারেনা। তবে আর চিন্তা নেই। এবার সকলেই নিজের ইচ্ছে মতো পড়াশোনা করতে পারবে। কারণ কেন্দ্র সরকার নিয়ে এসেছে ন্যাশনাল স্কলারশিপ পোর্টাল(National Scholarship Portal)।

এর মাধ্যমে বিভিন্ন স্কলারশিপের আবেদন করা যাবে। সংখ্যালঘু ছাত্রছাত্রীরা প্রযুক্তিগত প্রোগ্রামে নাম নথিভুক্ত করার জন্য আবেদন করতে পারবে। এই স্কলারশিপ যোগ্য শিক্ষার্থীদের দেওয়া হয়ে থাকে। যার ফলে তারা পেশাদার শিক্ষা গ্রহণ করতে পারে। এই ধরনের স্কলারশিপের দায়িত্বভার রয়েছে ভারত সরকারের সংখ্যালঘু বিষয়ক মন্ত্রকের ওপর।

ন্যাশনাল স্কলারশিপ পোর্টাল বৃত্তি কী?

এই স্কলারশিপ-কে অনেকেই মেরিট কাম মিনস নামেও অনেকে চিনে থাকবেন। এই স্কলারশিপের মাধ্যমে সংখ্যালঘু ছাত্রছাত্রীদের শিক্ষালাভের জন্য আর্থিক সহায়তা প্রদান করা হয়। তবে এটি তাদের পরিবারের আয় ও তাদের যোগ্যতার ওপর নির্ভর করে। এই বৃত্তি পেতে গেলে যোগ্যতার মানদণ্ডে উত্তীর্ণ হতে হবে। ন্যাশনাল স্কলারশিপে(National Scholarship Portal) আবেদন করার জন্য বেশকিছু শর্ত রয়েছে। এই শর্তগুলি পূরণ না হলে আবেদন বাতিল করে দেওয়া হয়।

এই স্কলারশিপ সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর ছাত্র-ছাত্রীদের দেওয়া হয়ে থাকে। এই স্কলারশিপের জন্য যোগ্য প্রার্থীরা পুরস্কারের জন্য আবেদন করতে পারে। 1992 সালের সংখ্যালঘু জাতীয় আইন কমিশন অনুযায়ী, শিখ, খ্রিস্টান, জৈন, বৌদ্ধ, মুসলিম ও পার্সি জনগোষ্ঠীর মানুষেরা সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের অন্তর্ভুক্ত। ভারতের প্রতিটি রাজ্যে ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে বসবাসকারী সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের দরিদ্র ও মেধাবী ছাত্র-ছাত্রীরা এই স্কলারশিপের জন্য আবেদন করতে পারে।

ন্যাশনাল স্কলারশিপ পোর্টালে বৃত্তির জন্য আবেদন করার যোগ্যতা :-

  1. আবেদনকারী-কে ভারতবর্ষের স্থায়ী বাসিন্দা হতে হবে।
  2. সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর অন্তর্গত হতে হবে।
  3. পূর্ববর্তী চূড়ান্ত পরীক্ষায় আবেদনকারী-কে ন্যূনতম 50% মার্কস পেতে হবে।
  4. আবেদনকারী-কে পেশাদার বা কারিগরি শিক্ষালাভের জন্য ভর্তি হতে হবে।
  5. আবেদনকারীর পরিবারের বার্ষিক আয় 2.50 লাখ টাকার মধ্যে হতে হবে।

ন্যাশনাল স্কলারশিপ পোর্টালে(National Scholarship Portal) কোন্ ক্লাস থেকে আবেদন করা যায়?

এই বৃত্তির জন্য ক্লাস 1 থেকেই আবেদন করা যায়। এর চারটি বিভাগ রয়েছে-

প্রাক ম্যাট্রিক স্কলারশিপ প্রোগ্রাম
পোস্ট ম্যাট্রিক স্কলারশিপ প্রোগ্রাম
উচ্চশিক্ষা বৃত্তি প্রোগ্রাম
মেরিট কাম মিন্স স্কলারশিপ প্রোগ্রাম

  1. প্রাক ম্যাট্রিক স্কলারশিপ প্রোগ্রাম- এই প্রোগ্রামে ক্লাস 1 থেকে ক্লাস 10 পর্যন্ত ছাত্র-ছাত্রীরা আবেদন করতে পারে।
  2. পোস্ট ম্যাট্রিক স্কলারশিপ প্রোগ্রাম- এই প্রোগ্রামে মাধ্যমিকের পর থেকে কলেজ স্তরের ছাত্রছাত্রীরা আবেদন করতে পারে। তবে এক্ষেত্রে তাদের আইটিআই, বি.এসসি, বি.কম, বি.টেক, মেডিকেল জাতীয় পেশাদারী প্রোগ্রামে নাম নথিভুক্ত করতে হবে।
  3. উচ্চশিক্ষা বৃত্তি প্রোগ্রাম- এই প্রোগ্রামে আই আই টি ও আই আই এম-এর মতো জাতীয় স্তরের শীর্ষ বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে ভর্তি হলে বৃত্তি দেওয়া হয়ে থাকে।
  4. মেরিট কাম মিন্স স্কলারশিপ প্রোগ্রাম- এই প্রোগ্রামে পেশাদার কোর্সে ভর্তি হওয়া স্নাতক ও স্নাতকোত্তর স্তরের ছাত্র-ছাত্রীদের আর্থিক অনুদান দেওয়া হয়ে থাকে।

ন্যাশনাল স্কলারশিপ পোর্টাল বৃত্তির সুবিধা :-

এই বৃত্তির মাধ্যমে বহু ছাত্র-ছাত্রীর উচ্চশিক্ষা লাভের আশা পূরণ হয়। আবেদনকারীরা নির্দিষ্ট পরিমাণ আর্থিক সহায়তা পেয়ে থাকে। এর পাশাপাশি তাদের সুপারভিজন স্কলারশিপ দেওয়া হয়ে থাকে। এই স্কলারশিপটি পাওয়ার আশায় বহু ছাত্র-ছাত্রী পেশাদারী তথা প্রযুক্তিগত কোর্সে ভর্তি হয়। যার ফলে কোর্স শেষে তারা ভালো বেতনের চাকরি পাওয়ার সুযোগ পেয়ে থাকে।

ন্যাশনাল স্কলারশিপ পোর্টাল বৃত্তির মাধ্যমে কোন্ কোন্ ক্ষেত্রে আর্থিক সুবিধা প্রদান করা হয়ে থাকে?

  1. প্রতিবন্ধী ছাত্র-ছাত্রীরা দেশের শীর্ষস্থানীয় বিশ্ববিদ্যালয় গুলিতে ভর্তি হলে এই স্কলারশিপের দৌলতে বিভিন্ন সুবিধা সহ প্রতিবছর 2 লাখ টাকা পর্যন্ত দেওয়া হয়ে থাকে।
  2. এস.টি ছাত্ররা উচ্চতর শিক্ষা লাভের জন্য জাতীয় ফেলোশিপ হিসেবে প্রতি মাসে 28 হাজার টাকা করে পেয়ে থাকে।
  3. প্রধানমন্ত্রী বৃত্তি প্রকল্পের দৌলতে ছাত্রীরা 3 হাজার টাকা আর ছাত্ররা 2 হাজার 500 টাকা করে পেতে পারে।
  4. অবিবাহিত মেয়েরা ইন্দিরা গান্ধী বৃত্তির মাধ্যমে প্রতিবছর 36 হাজার 200 টাকা করে পায়।
  5. বিশ্ববিদ্যালয়ের র‍্যাংক করলে 2 বছরের জন্য প্রতিবছর 3 হাজার 100 টাকা করে দেওয়া হয়ে থাকে।
  6. এস.সি ছাত্র-ছাত্রীদের সম্পূর্ণ টিউশন ফি সহ অন্যান্য ফি কেন্দ্র সরকারের তরফ থেকে দিয়ে দেওয়া হয়।
  7. প্রাক ম্যাট্রিক বৃত্তি প্রোগ্রামে এন্ট্রি ফি, টিউশন ফি ও জীবিকা ভাতা দেওয়া হয়। পোস্ট ম্যাট্রিক বৃত্তি প্রোগ্রামেও এই সুবিধা রয়েছে।

ন্যাশনাল স্কলারশিপ পোর্টাল বৃত্তিতে আবেদনের জন্য প্রয়োজনীয় নথি :-

  1. মার্কশিট ও সার্টিফিকেট।
  2. বসবাসের প্রমাণপত্র।
  3. আয়কর ফর্ম।
  4. আয়ের প্রমাণপত্র।
  5. ব্যাংকের পাসবুকের প্রথম পৃষ্ঠার ছবি।
  6. কাস্ট সার্টিফিকেট।
  7. আধার কার্ড।

ন্যাশনাল স্কলারশিপ পোর্টাল বৃত্তিতে কীভাবে আবেদন করা যাবে?

  1. আবেদন করতে হলে প্রথমে এই স্কলারশিপের অফিশিয়াল ওয়েবসাইটে লগ ইন করতে হবে।
  2. এরপর অ্যাকাউন্ট খুলতে হবে। তারপর নিয়ম ও শর্তে ক্লিক করতে হবে।
  3. এত দূর হওয়ার পর স্ক্রিনে নতুন রেজিস্ট্রেশনের ফরম চলে আসবে। সেখানে নিজের নাম, রাজ্য, জন্ম তারিখ, বৈধ মোবাইল নম্বর, নিজের লিঙ্গ আর ব্যাংকের আই এফ এস সি কোড-এর মতো বিভিন্ন তথ্য সঠিকভাবে পূরণ করতে হবে।
  4. নিজের ক্লাস অনুযায়ী বৃত্তির বিভাগ বেছে নেবে। এই সম্পর্কে জানতে আমাদের প্রতিবেদনটি আরো একবার দেখে নিও। প্রথমদিকে এই সম্পর্কে ভালোভাবে লেখা আছে।
  5. এরপর ব্যাংক একাউন্টের ডিটেলস লিখতে হবে।
  6. তারপর পাসওয়ার্ড ও আইডি তৈরি করতে হবে। ক্যাপচা যাচাইয়ের পর চাইলে পাসওয়ার্ড পরিবর্তন করতে পারবেন।
  7. এরপর ফরমে সমস্ত প্রয়োজনীয় একাডেমিক ডিটেলস উল্লেখ করতে হবে।
  8. নিজের যোগ্যতা অনুযায়ী যদি 50 হাজার টাকার বেশি বৃত্তি হয়, তাহলে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র আপলোড করতে হবে।
  9. এরপর সমস্ত তথ্য ভালোভাবে যাচাই করে নেবে। তারপর সাবমিট অপশনে ক্লিক করবে। আবেদনপত্র প্রিন্ট করে প্রতিষ্ঠানে জমা করলেই হয়ে যাবে।

ন্যাশনাল স্কলারশিপের কিছু গুরুত্বপূর্ণ লিঙ্ক:

ন্যাশনাল স্কলারশিপের অফিসিয়াল ওয়েবসাইট লিঙ্কClick Here
ন্যাশনাল স্কলারশিপের আবেদন করার লিঙ্কClick Here
Share This Article
Leave a comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *