Kotak Kanya Scholarship: 2024 সালে এসেও কন্যা সন্তান হলে পরিবারের চিন্তার শেষ থাকে না। আজও অনেকের কাছে কন্যা সন্তান বোঝা। বহু পিতা-মাতা নিজেদের কন্যা সন্তানের পড়াশোনার জন্য খরচ করতে রাজি নয়। কিন্তু তা বলে কি তাদের স্বপ্ন আটকে যাবে? মাঝপথেই ছেড়ে দিতে হবে পড়াশুনা! মোটেও না। আজ ছাত্রীদের জন্য রয়েছে বেশ কিছু স্কলারশিপ। সব স্কলারশিপ সম্পর্কে তারা জানতেই পারেনা। এই প্রতিবেদনে এমনই একটি স্কলারশিপের ব্যাপারে আমরা কথা বলব।
এই প্রতিবেদনে আমরা কোটাক কন্যা স্কলারশিপ সম্পর্কে কথা বলব। এটি অর্থনৈতিকভাবে পিছিয়ে পড়া পরিবারের কন্যা সন্তানদের জন্য ডিজাইন করা হয়েছে। এই স্কলারশিপের মাধ্যমে দ্বাদশ শ্রেণীর পরে মেধাবী ছাত্রীরা পেশাদারী কোর্সে উচ্চশিক্ষা লাভ করতে পারবে। তাদের পড়াশোনার খরচ নিয়ে বিন্দুমাত্র চিন্তা করতে হবে না। কী এই কোটাক কন্যা স্কলারশিপ ? কিভাবে আবেদন করা যাবে এই স্কলারশিপে? কারা যোগ্য আবেদন করার জন্য? এই ধরনের সব প্রশ্নের উত্তর রয়েছে আজকের প্রতিবেদনে।
কোটাক কন্যা স্কলারশিপ (KOTAK KANYA SCHOLARSHIP) কী?
পড়াশোনা শুধুমাত্র জ্ঞান আহরণ বা জ্ঞান বৃদ্ধির জন্য করা হয় না। পড়াশোনা একটা মেয়েকে স্বাবলম্বী করে তুলতে সহায়তা করে। পেশাদারী শিক্ষায় শিক্ষিত হলে একজন মেধাবী ছাত্রী হয়ে উঠতে পারে স্বাধীন নারী। কিন্তু নিম্ন আয়ের পরিবারে পেশাদারী শিক্ষার যে খরচ তা বহন করা খুবই কষ্টদায়ক। কিন্তু এই ধরনের পড়াশোনা ভবিষ্যতে চাকরি পেতে অনেক সহায়তা করে।
কোটাক কন্যা স্কলারশিপ (Kotak Kanya Scholarship)-এর মাধ্যমে অর্থনৈতিকভাবে পিছিয়ে পড়া পরিবারের কন্যা সন্তান পেশাদারী তথা কারিগরি শিক্ষা লাভ করার জন্য আর্থিক সহায়তা পেতে পারবে। তবে তার জন্য তাকে অবশ্যই মেধাবী হতে হবে। পাশাপাশি তাকে ভর্তি হতে হবে কোনো পেশাদারী কোর্সে। দ্বাদশ শ্রেণীর উত্তীর্ণ হওয়ার পরে পেশাদারী কোর্সে ভর্তি হলে এই স্কলারশিপে আবেদন করা যাবে। এই স্কলারশিপ মেয়েদের জন্য ডিজাইন করা হয়েছে।
কোন্ কোন্ কোর্সে ভর্তি হলে কোটাক কন্যা স্কলারশিপ (KOTAK KANYA SCHOLARSHIP)-এ আবেদন করা যাবে?
দ্বাদশ শ্রেণীর উত্তীর্ণ হওয়ার পর কোনো মেয়ে যদি বি.ফার্মেসি, আর্কিটেকচার, ডিজাইন, ইন্টিগ্রেটেড এলএলবি, ইঞ্জিনিয়ারিং, এমবিবিএস, বি.এসসি, বিএস গবেষণা, বিএস এমএস, নার্সিং, বিডিএস ইত্যাদির মতো কোনো পেশাদারী কোর্সে ভর্তি হয়, তাহলে কোটাক কন্যা স্কলারশিপ -এ আবেদন করতে পারবে।
তবে অনেকেই কোটাক মাহিন্দ্রা গ্রুপ সম্পর্কে জানেনা। তাদের জন্য অল্প করে জানিয়ে রাখি, এটি ভারতের প্রথম নন ব্যাংকিং ফিনান্স কোম্পানি। কোটাক গ্রুপের সাথে যুক্ত রয়েছে কোটাক এডুকেশন ফাউন্ডেশন।
কোটাক কন্যা স্কলারশিপ (KOTAK KANYA SCHOLARSHIP)-এ আবেদন করার যোগ্যতা :-
প্রতিটি স্কলারশিপে আবেদন করার জন্য কিছু ক্রাইটেরিয়া থাকে। সেগুলির সাথে মিলে গেলেই নির্দিষ্ট স্কলারশিপে আবেদন করা যায়। কোটাক কন্যা স্কলারশিপ-এ আবেদন করার যোগ্যতার মানদন্ড হল-
- এই স্কলারশিপে আবেদন করার জন্য ভারতের স্থায়ী বাসিন্দা হতে হবে।
- এই স্কলারশিপে কেবলমাত্র ভারতের মেধাবী ছাত্রীরাই আবেদন করতে পারবে।
- কোটাক কন্যা স্কলারশিপ -এ আবেদন করার জন্য উচ্চমাধ্যমিক অথবা সমমানের পরীক্ষায় ন্যূনতম 85 শতাংশ মার্কস পেতে হবে।
- এই স্কলারশিপে আবেদন করার জন্য পরিবারের বার্ষিক আয় 6 লাখ টাকার নিচে হতে হবে।
- যদি ভারতের কোনও মেধাবী ছাত্রী উচ্চমাধ্যমিকের পর প্রফেশনাল কোর্সে ভর্তি হয়, তাহলেই এই স্কলারশিপে আবেদন করা যাবে।
- কোটাক মাহিন্দ্রা গ্রুপে কর্মরত কোনো ব্যক্তির কন্যা সন্তান এই স্কলারশিপে আবেদন করতে পারবে না।
কোটাক কন্যা স্কলারশিপ (KOTAK KANYA SCHOLARSHIP)-এ আবেদন করলে কত টাকা আর্থিক সহায়তা পাওয়া যাবে?
কোটাক কন্যা স্কলারশিপ কেবলমাত্র প্রফেশনাল ডিগ্রি কোর্সে ভর্তি হলেই আবেদন করা যাবে। এই স্কলারশিপে আবেদন করলে কোর্স শেষ না হওয়া পর্যন্ত প্রতিবছর আর্থিক সহায়তা দেওয়া হবে। এই স্কলারশিপের দৌলতে মেধাবী ছাত্রীর প্রতিবছর ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত বৃত্তি পেয়ে যাবে।
কবে কোটাক কন্যা স্কলারশিপ (Kotak Kanya Scholarship)-এ আবেদন করা যাবে?
2024 সালে আর এই স্কলারশিপের আবেদন করা যাবে না। কারণ এই বছরের মতো কোটাক কন্যা স্কলারশিপ -এ আবেদনের প্রক্রিয়া শেষ হয়েছে। নভেম্বরে শেষ তারিখ ছিল। তবে 2025 এই স্কলারশিপে পুনরায় আবেদন করা যাবে।
কোটাক কন্যা স্কলারশিপ (Kotak Kanya Scholarship)-এ আবেদনের জন্য প্রয়োজনীয় নথি :-
প্রতিটি স্কলারশিপে আবেদনের জন্য কিছু নথিপত্র তথা ডকুমেন্টের প্রয়োজন হয়। কোটাক কন্যা স্কলারশিপ (KOTAK KANYA SCHOLARSHIP)-এ আবেদনের জন্য প্রয়োজনীয় নথি-
- আধার কার্ড,
- ব্যাংকের পাসবুক,
- দ্বাদশ শ্রেণীর পরীক্ষার মার্কশিট,
- দ্বাদশ শ্রেণীর পরীক্ষার শংসাপত্র,
- আয়ের প্রমাণপত্র,
- পাসপোর্ট সাইজের ছবি,
- বিশেষভাবে সক্ষম হলে তার প্রমাণ পত্র,
- একক পিতা-মাতা থাকলে অথবা অনাথ হলে পিতা মাতার মৃত্যুর শংসাপত্র,
- কলেজ প্রবেশিকা পরীক্ষার স্কোরবোর্ড,
- বাড়ির ছবি,
- কলেজে ভর্তির রশিদ,
- কলেজ থেকে প্রাপ্ত বোনাফাইড সার্টিফিকেট।
কোটাক কন্যা স্কলারশিপ (KOTAK KANYA SCHOLARSHIP)-এ নির্বাচনের প্রক্রিয়া :-
এই স্কলারশিপের সকলে আবেদন করতে পারলেও, আর্থিক সহায়তা যোগ্যতার ভিত্তিতে দেওয়া হয়। কোটাক কন্যা স্কলারশিপ (KOTAK KANYA SCHOLARSHIP)-এ সবার প্রথমে দ্বাদশ শ্রেণীর পরীক্ষায় প্রাপ্ত মার্কস দেখা হয়। এরপর পরিবারের বার্ষিক আয় বিবেচনা করা হয়। নির্বাচিত প্রার্থীদের দুই রাউন্ডের ইন্টারভিউ হয় কর্মকর্তাদের সাথে। তারপর যোগ্য প্রার্থীদের তালিকা প্রকাশ পায়। আর কয়েক মাসের মধ্যে নির্বাচিত প্রার্থীদের বৈধ ব্যাংক একাউন্টে টাকা পাঠিয়ে দেওয়া হয়।
কোটাক কন্যা স্কলারশিপ (KOTAK KANYA SCHOLARSHIP)-এ আবেদনের পদ্ধতি :-
- সবার প্রথমে এইচ স্কলারশিপের অফিশিয়াল ওয়েবসাইটে লগইন করতে হবে। এরপর এপ্লাই বাটনে ক্লিক করতে হবে।
- তারপর নিজের ফোন নম্বর ও নাম রেজিস্টার করতে হবে।
- এই পর্যন্ত হয়ে গেলে এপ্লাই করার জন্য লগইন করতে হবে। সেই সময় রেজিস্ট্রিকৃত আইডি লিখতে হবে। তারপর আবেদন প্রক্রিয়া শুরু হয়ে যাবে।
- আবেদনের ফরমটি যথাযথভাবে পূরণ করার পর প্রয়োজনীয় নথি স্ক্যান করে আপলোড করতে হবে।
- এরপর আবেদনপত্রটি ভালোভাবে দেখে নেবেন। কোনো ভুল থাকলে তখনই ঠিক করে নেবেন।
- তারপর সাবমিট বাটনে ক্লিক করতে হবে। তাহলেই হয়ে যাবে কোটাক কন্যা স্কলারশিপ (KOTAK KANYA SCHOLARSHIP)-এ আবেদন।
কোটাক কন্যা স্কলারশিপ সম্পর্কিত কিছু প্রশ্ন ও তার উত্তর( Frequently asked questions):
১) কোটাক কন্যা স্কলারশিপ (KOTAK KANYA SCHOLARSHIP)-এ কারা আবেদন করতে পারবে না?
কোটাক মাহিন্দ্রাতে কর্মরত ব্যক্তিদের কন্যা সন্তানেরা এই স্কলারশিপে আবেদন করতে পারবে না।
২) কোটাক কন্যা স্কলারশিপ (KOTAK KANYA SCHOLARSHIP)-এ আবেদন করলে কত টাকা পাওয়া যাবে?
টিউশন ফি, ইন্টারনেট ফি সহ বিভিন্ন ফি বাবদ বছরে 1.5 লাখ টাকা পাওয়া যাবে।
কোটাক কন্যা স্কলারশিপের কিছু গুরুত্বপূর্ণ লিঙ্ক:
কোটাক কন্যা স্কলারশিপের অফিসিয়াল ওয়েবসাইট লিঙ্ক
কোটাক কন্যা স্কলারশিপে আবেদন পত্র ডাউনলোড লিঙ্ক
উপসংহার :
Kotak Mahindra Group কর্তৃক পরিচালিত কোটাক এডুকেশন ফাউন্ডেশন এর মাধ্যমে কোটাক কন্যা স্কলারশিপ(Kotak Kanya Scholarship)প্রদান করা হয়। মেধাবী ও অর্থনৈতিকভাবে দুর্বল পরিবার থেকে আসা বিভিন্ন মেয়েরা যাদের উচ্চশিক্ষা অর্থাৎ স্নাতক স্তরের জন্য আর্থিক সাহায্য প্রয়োজন তাদের এই স্কলারশিপটি প্রদান করা হয়ে থাকে।
এই স্কলারশিপের মাধ্যমে অর্থনৈতিকভাবে দুর্বল কিন্তু মেধাবী ছাত্রীরা যেমন তাদের উচ্চশিক্ষা সম্পূর্ণ করতে পারে তেমনি ভবিষ্যতে স্বনির্ভর হয়ে সমাজে এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। এই স্কলারশিপের মূল উদ্দেশ্য হলো অর্থনৈতিকভাবে দুর্বল পরিবারের মেয়েদের উচ্চশিক্ষা চালিয়ে যেতে সহায়তা করে তাদের স্বাবলম্বী ও আত্মনির্ভরশীল করে তোলা এবং সমাজের নারীদের কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করে দেওয়া।
এই স্কলারশিপ দরিদ্র কিন্তু মেধাবী ছাত্রীদের যেই অর্থ প্রদান করে থাকে তার মাধ্যমে তারা পড়াশোনার ফি, হোস্টেল খরচ, বইপত্র এবং অন্যান্য শিক্ষা সংক্রান্ত ব্যয়ের জন্য ব্যবহার করে থাকে। এই স্কলারশিপ শুধুমাত্র একটি আর্থিক সহায়তা নয় এর মাধ্যমে মেধাবী ছাত্রীরা জীবনের প্রতিকূলতাকে জয় করে এগিয়ে যেতে অনুপ্রাণিত হয়ে থাকে। শিক্ষা হোক দেশের সকল কন্যার অধিকার এই মতামতকেই সমাজে প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টা করে থাকে এই কোটাক কন্যা স্কলারশিপ পদক্ষেপটি।