গুগল স্কলারশিপ: শিক্ষার্থীদের দিচ্ছে ২ লক্ষ ১৬ হাজার টাকা বৃত্তি, কারা পাবেন এমন সুযোগ জানুন বিস্তারিত

Google Scholarship: দেশের বা রাজ্যের ছাত্র ছাত্রীদের উচ্চ শিক্ষা লাভ করার ক্ষেত্রে যাতে পরিবারের আর্থিক অবস্থা যাতে কোনও ভাবেই তাদের শিক্ষা লাভের পথের কাঁটা না হয়ে দাঁড়ায়, তার জন্য বিভিন্ন সময়েই রাজ্য, কেন্দ্র এমনকী বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থা ছাত্র-ছাত্রীদের বিভিন্ন ধরনের স্কলারশিপের দিয়ে থাকেন করা হয়।

আমরা এই প্রতিবেদনে যে স্কলারশিপ টা নিয়ে আলোচনা করব সেটি আন্তর্জাতিক বেসরকারি একটি সংস্থার স্কলারশিপ যেটি গুগল স্কলারশিপ নামে পরিচিত।

আর শুরুর পর থেকে এই স্কলারশিপ টি আলোড়ন ফেলেছে ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে। মেধাবী ছাত্র ছাত্রীদের স্বপ্ন সফল করার লক্ষ্যে এবার এই বেসরকারি সংস্থার স্কলারশিপটি দিচ্ছে দারুন আর্থিক সুবিধা। যার মাধ্যমে লক্ষ লক্ষ দরিদ্র পরিবারের ছাত্রছাত্রীরা উপকৃত হচ্ছেন লক্ষ লক্ষ ছাত্র ছাত্রী।

আজকের প্রতিবেদনে আমরা আলোচনা করব এই google স্কলারশিপ সম্বন্ধে। এই স্কলারশিপে আপনারা কি কি সুবিধা পাবেন ? কিভাবে আবেদন করবেন ? এবং কতটা করে গুগল আপনাদের স্কলারশিপ দেবে ? গুগল স্কলারশিপ সম্বন্ধে সমস্ত খুঁটিনাটি তথ্য পেয়ে যাবেন আমাদের আজকের আর্টিকেলটিতে তাই আর্টিকেলটিকে শেষ পর্যন্ত অবশ্যই পড়ুন।। আসা করব এই আর্টিকেলটি পড়ে আপনি আপনার সমস্ত প্রশ্নের উত্তর পেয়ে যাবেন।

গুগল স্কলারশিপ (Google Scholarship) কী ?

আপনার যদি কম্পিউটার বা প্রযুক্তির বিভিন্ন দিক নিয়ে স্বচ্ছ ধারণা থাকে, তাহলে নিঃসন্দেহে এই স্কলারশিপ আপনার জন্য সুবর্ন সুযোগ হয়ে উঠতে পারে। প্রযুক্তিগত ক্ষেত্রে অধ্যায়নরত শিক্ষার্থীদের জন্য গুগল নিয়ে এসেছে এমনই এক দারুন সুযোগ। তবে এই স্কলারশিপের রয়েছে বেশ কিছু ভাগ।

  1. জেনারেশন গুগল স্কলারশিপ – মূলত মহিলাদের জন্য গুগল প্রণয়ন করেছে এই বিশেষ স্কলারশিপ। এশিয়ার দেশগুলির অন্তর্গত নারীরা এই স্কলারশিপের ভোক্তা হতে পারবেন। এ ক্ষেত্রে তাঁদের অবশ্যই কম্পিউটার বিজ্ঞান এবং তথ্য প্রযুক্তিগত দিক থেকে অধ্যায়নরত হতে হবে।
  2. গুগল কনফারেন্স স্কলারশিপ – গুগল প্রদত্ত এই স্কলারশিপে নারী পুরুষ নির্বিশেষে আবেদন করতে পারবে। তবে এই স্কলারশিপ উচ্চ শিক্ষার জন্য বৃত্তি প্রদান করবে না, এই স্কলারশিপ আপনাকে উচ্চ শিক্ষা লাভের জন্য বিনা মুল্যে ভ্রমণের খরচের যোগান দেবে।
  3. গুগল ইউরোপ স্কলারশিপ ফর স্টুডেন্টস উইথ ডিসাবেলিটিস – ইউরোপের বিশেষ ভাবে সক্ষম যে সকল শিক্ষার্থী কম্পিউটার বিজ্ঞান কিংবা তথ্য প্রযুক্তি নিয়ে অধ্যয়ন করছে, তাঁদের উচ্চ শিক্ষা লাভের জন্য এই বৃত্তি প্রদান করা হয়।
  4. গুগল SVA স্কলারশিপ – মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কম্পিউটার ও প্রযুক্তি বিদ্যা নিয়ে পঠনরত ছাত্রছাত্রীদের জন্য এই বিশেষ স্কলারশিপের ব্যবস্থা করেছে গুগল।
  5. গুগল রিসার্চ আওয়ার্ড – যে সকল মেধাবী শিক্ষার্থী প্রযুক্তি বিদ্যায় গবেষণার ক্ষেত্রে সফলতা লাভ করেছে, তাঁদের গুগল রিসার্চ আওয়ার্ড প্রদান করা হয়।

গুগল স্কলারশিপেল (Google Scholarship) উদ্দেশ্য:

  1. শিক্ষার্থীদের উৎসাহী করা – কম্পিউটার বিজ্ঞান এবং প্রযুক্তি বিদ্যা নিয়ে যে সকল ছাত্র ছাত্রীরা অধ্যয়ন করছে, সেই পথ ধরে এগোলে যাতে তাঁরা নিজেদের লক্ষ্য পূরণ করতে পারে, তাঁদের সহায়তা করাই এই স্কলারশিপের অন্যতম বিশেষ উদ্দেশ্য।
  2. গবেষণার কাজে সহায়তা – শুধু যে আর্থিক বৃত্তি প্রদান করবে ছাত্র ছাত্রীদের তাই নয়, বরং এই স্কলারশিপ মেধাবী শিক্ষার্থীদের গবেষণার স্বপ্নকেও পূরণ করে। এর ফলেই নতুন প্রযুক্তি ও নতুন নতুন জ্ঞানের বিকাশ সাধিত হয়।
  3. বিভিন্ন প্রান্তের শিক্ষার্থীদের শিক্ষার আলো পৌঁছে দেওয়া – এশিয়া, ইউরোপ, যুক্তরাষ্ট্র-সহ বিভিন্ন জায়গার মেধাবী শিক্ষার্থীদের জন্য এই স্কলারশিপ এক নতুন দিশা দেখিয়েছে।
  4. ফ্রি ট্রাভেল – কিছু কিছু স্কলারশিপ বৃত্তি প্রদান করে না, উপরন্তু উচ্চ শিক্ষার জন্য ছাত্র ছাত্রীদের দেশ বিদেশে ভ্রমণের জন্য বিনা মুল্যে যাতায়াতের ব্যবস্থা করে দেয়।
  5. বিশেষ ভাবে সক্ষম শিক্ষার্থীদের সহায়তা করা – যে সকল শিক্ষার্থী শারীরিক ভাবে বিশেষ ভাবে সক্ষম, অথচ মেধাবী, তাঁদের সহায়তা করার জন্য এই স্কলারশিপের ভূমিকা বেশ গুরুত্বপূর্ণ।

গুগল স্কলারশিপের (Google Scholarship) সুবিধা:

  1. আর্থিক সাহায্য প্রদান – গুগল স্কলারশিপ কম্পিউটার বিজ্ঞান ও তথ্য প্রযুক্তি বিদ্যার অধীনস্থ ছাত্র ছাত্রীকে আর্থিক সাহায্য প্রদান করে। এ ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের বছরে 2500 US ডলার প্রদান করা হয়ে থাকে।
  2. মেন্টরশিপ ও নেটওয়ার্কিং – এই স্কলারশিপের উপভোক্তা শিক্ষার্থীরা দেশ বিদেশের নানা স্থানের অভিজ্ঞদের কাছ থেকে পরামর্শ নিতে পারে এবং তাঁদের ভবিষ্যতকে দৃঢ় ভাবে প্রতিষ্ঠিত করার সংকল্প নেয়। এছাড়াও বিভিন্ন দেশের ছাত্র ছাত্রীর সঙ্গে যোগসূত্র স্থাপন করে একসঙ্গে নানা কাজ করতে সচেষ্ট হয়।
  3. চাকরির সুযোগ – গুগল স্কলারশিপপ্রাপ্ত ছাত্র ছাত্রীরা গুগলের বিভিন্ন শাখা প্রশাখায় ইন্টার্নশিপ করার সুযোগ পায়। বলা বাহুল্য, এর ফলে তাঁদের চাকরি পাওয়ার সুযোগ বৃদ্ধি পায়। এছাড়াও ছাত্র ছাত্রীদের উন্নতির জন্য বিভিন্ন কেরিয়ার কাউন্সেলিংয়ের আয়োজন করা হয়।
  4. স্বীকৃতি ও সম্মান প্রদান – আপনি যদি এই স্কলারশিপের অন্তর্ভুক্ত হন, তাহলে শুধু গুগল নয়, যে কোনো সংস্থাতেই চাকরি পাওয়ার সুযোগ যেমন পাবেন, তেমন স্বীকৃতি ও সম্মানও পাবেন।
  5. বিশেষ ভাবে সক্ষম শিক্ষার্থীর জন্য সহায়তা – শারীরিক প্রতিকূলতা কোনও ভাবেই যে উচ্চ শিক্ষা অর্জনকে দমন পারবে না, এই কথা গুগল 7 প্রমাণ করেছে। তাই বিশেষ ভাবে সক্ষম শিক্ষার্থীদের উন্নতি সাধনের লক্ষ্যেও গুগল স্কলারশিপ তাঁদের সহযোগিতা করে।

গুগল স্কলারশিপে (Google Scholarship) আবেদন করার জন্য যোগ্যতা:

অন্যান্য স্কলারশিপের মতই গুগল স্কলারশিপে আবেদন জানানোর জন্য বেশ কিছু যোগ্যতা অবলম্বন করা হয়, যা নিম্নরূপ।

  1. শিক্ষার্থীকে অতি অবশ্যই কম্পিউটার বিজ্ঞান অথবা প্রযুক্তি বিজ্ঞানের কোনও একটি দিকে অধ্যায়নরত হতে হবে
  2. আবেদনকারীকে অবশ্যই মেধাবী হতে হবে। পরীক্ষার ফলাফলে 90% এর উপর প্রাপ্ত নম্বর হতে হবে
  3. Leadership এবং প্যাশন ডেমনস্ট্রেশনে পারদর্শী হতে হবে।

গুগল স্কলারশিপে (Google Scholarship) আবেদন করার নথি:

এই স্কলারশিপে আবেদনের জন্য যে সকল নথি প্রয়োজন, তা হল

  1. পরিচয় পত্র ( বার্থ সার্টিফিকেট/ ভোটার কার্ড/ ড্রাইভিং লাইসেন্স ইত্যাদি)
  2. শিক্ষাগত যোগ্যতার প্রমাণ
  3. সিভি
  4. পারিবারিক উপার্জন
  5. শিক্ষাগত কোনও অর্জন
    এছাড়াও ফর্ম ফিলাপের সময় বেশ কিছু ছোট বড় প্রশ্নের উত্তর দিতে হয়।

গুগল স্কলারশিপ স্কিমের কিছু গুরুত্বপূর্ণ লিঙ্ক:

গুগল স্কলারশিপের অফিসিয়াল ওয়েবসাইট লিঙ্ক

গুগল স্কলারশিপের আবেদন করার লিঙ্ক

উপসংহার :

গুগল স্কলারশিপ(Google Scholarship) হলো গুগল কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মেধাবী ও আগ্রহী ছাত্রছাত্রীদের জন্য দেওয়া এক বিশেষ ধরনের স্কলারশিপ। এর মাধ্যমে গুগল বিভিন্ন টেকনোলজি, কম্পিউটার সাইন্স, কোডিং ডেটা সাইন্স, আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইত্যাদি বিষয়ে শিক্ষার্থীদের উন্নত প্রশিক্ষণ ও আর্থিক সহায়তা প্রদান করে থাকে।

এই স্কলারশিপের মূল উদ্দেশ্য হলো মেধাবী ও প্রযুক্তিপ্রেমী ছাত্র-ছাত্রীদের আর্থিকভাবে সাহায্য করা এবং নতুন প্রজন্মকে ডিজিটাল দক্ষতা ও লার্নিং প্লাটফর্মে অংশগ্রহণে উৎসাহিত করা। এই স্কলারশীপ প্রযুক্তিতে আগ্রহী ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য এক দুর্দান্ত সুযোগ।

এটি আর্থিক সহায়তার পাশাপাশি মেধা ও পরিশ্রম মূল্যায়ন করে। যারা ভবিষ্যতের টেকনোলজির দুনিয়ায় কিছু করতে চায় তাদের জন্য গুগল স্কলারশিপ এক মূল্যবান অপরচুনিটি। জ্ঞান অর্জনের জন্য টাকা নয় প্রয়োজন আগ্রহ ও সঠিক সুযোগ আর সেই সুযোগ এনে দেয় এই গুগল স্কলারশিপ।

Leave a Comment