Anant Merit Scholarship : আজকাল পড়াশোনার খরচ নেহাত কম নয়। সেই খরচ সামলাতে রীতিমতো হিমশিম খেয়ে যেতে হয় বাবা মায়েদের। পরিবারের বোঝা কমাতে তাই এগিয়ে আসতে হয় ছাত্র-ছাত্রীদেরই। তবে নিজের পড়াশোনা সামলে টাকা রোজগার করা খুবই মুশকিল। এ সময় মুশকিল আসান হয়ে আসে স্কলারশিপ।
পশ্চিমবঙ্গে এমন অনেক স্কলারশিপ রয়েছে যে সম্পর্কে ছাত্রছাত্রীরা জানেই না। আমার চেষ্টা করেছি সমস্ত স্কলারশিপের খবর তাদের কাছে পৌঁছানোর। আজকের প্রতিবেদনে আমরা অনন্ত মেরিট স্কলারশিপ (Anant Merit Scholarship)-এর সম্পর্কে কথা বলব।
পশ্চিমবঙ্গের মেধাবী ছাত্র-ছাত্রীদের পড়াশোনায় সাহায্য করার জন্য অনন্ত ফাউন্ডেশনের তরফ থেকে এই স্কলারশিপের সূচনা করা হয়। মূলত নিম্ন আয়ের পরিবার থেকে আসা পড়ুয়ারাই এই স্কলারশিপের আবেদন করতে পারবে। একবার সিলেক্ট হয়ে গেলে পড়াশুনার খরচ নিয়ে বিশেষ চিন্তা করতে হবে না তোমাদের।
অনন্ত মেরিট স্কলারশিপ (Anant Merit Scholarship)-এ আবেদনের জন্য নির্দিষ্ট পদ্ধতি রয়েছে। কিভাবে আবেদন করবে এই স্কলারশিপে? কারা আবেদন করতে পারবে? আবেদন করার সময় কী কী লাগবে? এই ধরনের সব জরুরি প্রশ্নের উত্তর রয়েছে আজকের প্রতিবেদনে। জেনে নাও বিস্তারিত।
অনন্ত মেরিট স্কলারশিপ (Anant Merit Scholarship) কী?
যেকোনো স্কলারশিপের নাম শুনলেই ছাত্র-ছাত্রীদের মাথায় প্রশ্ন আসে, এই স্কলারশিপটা আসলে কী? তোমাদের এই প্রশ্নের উত্তরই সবার প্রথমে আমরা দেবো। নিম্নবিত্ত পরিবারের মেধাবী সন্তানদের পড়াশোনায় সাহায্য করার জন্য অনন্ত ফাউন্ডেশন অনন্ত মেরিট স্কলারশিপ (Anant Merit Scholarship)-এর সূচনা করে। এর দৌলতে ছাত্র-ছাত্রীরা প্রতিমাসে আর্থিক সহায়তা পাবে। পশ্চিমবঙ্গের ছাত্রছাত্রীরা ৬ হাজার টাকা মতো পেয়ে যাবে এই স্কলারশিপ থেকে।
এই স্কলারশিপের মাধ্যমে তোমরা কোনো চিন্তা ছাড়াই পড়াশোনা চালিয়ে যেতে পারবে। এই স্কলারশিপের সাহায্যে আবেদনকারী নিজের স্বপ্ন পূরণ করতে পারবে। চাইলে উচ্চশিক্ষা লাভ করতেও পারবে। যে সমস্ত ছাত্র-ছাত্রী স্কলারশিপে আবেদন করার জন্য যোগ্য হবে তারা নিশ্চিন্তে পড়াশোনা করে দিতে পারবে। এর পাশাপাশি চাইলে অন্য স্কলারশিপের জন্যেও তোমরা আবেদন করতে পারবে।
তবে তোমরা যেই ইনস্টিটিউটে পড়াশোনা করছো বা ভর্তি হবে তার কর্তৃপক্ষের ওপর নির্ভর করবে তোমরা একসাথে একাধিক স্কলারশিপে আবেদন করতে পারবে কিনা। তবে তোমাদের জানিয়ে রাখি এই স্কলারশিপে আবেদন করতে গেলে কিন্তু নিজস্ব ব্যাংক একাউন্ট থাকা দরকার। যদি এখনো নিজস্ব ব্যাংক একাউন্ট না থেকে থাকে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ব্যাংকে একাউন্ট খুলে ফেলো।
অনন্ত মেরিট স্কলারশিপ (Anant Merit Scholarship)-এ আবেদনের যোগ্যতা :-
প্রতিটি স্কলারশিপের জন্য নির্দিষ্ট যোগ্যতার মানদন্ড রয়েছে। ঠিক তেমনভাবেই অনন্ত মেরিট স্কলারশিপ (Anant Merit Scholarship)-এর ক্ষেত্রেও এমন কিছু শর্ত রয়েছে, সেগুলি হলো –
- আবেদনকারীকে পশ্চিমবঙ্গের স্থায়ী বাসিন্দা হতে হবে।
- আবেদনকারী যেই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পড়ুয়া হবে, সেটি পশ্চিমবঙ্গের অন্তর্ভুক্ত হতে হবে।
- দশম ও দ্বাদশ শ্রেণীতে ন্যূনতম ৭০ শতাংশ মার্কস পেয়ে আবেদনকারীকে উত্তীর্ণ হতে হবে।
- আবেদনকারীর পরিবারের মাসিক আয় সর্বাধিক ৫ হাজার টাকা হতে পারবে।
- মাধ্যমিক, আইসিএসই, সিবিএসই, উচ্চ মাধ্যমিক, আইএসসি আর কলেজ পড়ুয়ারা এই স্কলারশিপের জন্য আবেদন করতে পারবে।
- স্নাতক স্তরের যে কোনো বিভাগে ভর্তি হলেই এই স্কলারশিপের জন্য আবেদন করা যাবে।
অনন্ত মেরিট স্কলারশিপ (Anant Merit Scholarship)-এ কত টাকা বৃত্তি পাওয়া যাবে?
অনন্ত ফাউন্ডেশনের এই স্কলারশিপে আবেদন করার পর যোগ্য বলে বিবেচিত হলে তবেই বৃত্তি পাওয়া যাবে। এই স্কলারশিপের ৫০ শতাংশ ছাত্রীদের জন্য সংরক্ষিত। এছাড়া শারীরিকভাবে প্রতিবন্ধী হলে তাদের জন্য বিশেষ ছাড় রয়েছে। অনন্ত মেরিট স্কলারশিপ (Anant Merit Scholarship)-এ তোমরা প্রতি বছর ৬ হাজার টাকা করে পেয়ে যাবে। প্রত্যেক মাসে তোমাদের একাউন্টে ৫০০ টাকা করে পৌঁছে যাবে।
অনন্ত মেরিট স্কলারশিপ (Anant Merit Scholarship)-এ আবেদনের জন্য প্রয়োজনীয় নথিপত্র :-
এই স্কলারশিপে আবেদন করার জন্য আবেদনকারীদের কাছে নিম্নলিখিত ডকুমেন্ট তথা নথি থাকতেই হবে –
- ঠিকানার যেকোনো প্রমাণপত্র (অ্যাটেস্টেড) অথবা রেশন কার্ড।
- আবেদনকারী পড়ুয়া শারীরিক প্রতিবন্ধী হলে, তার প্রমাণ পত্র।
- আধার কার্ডের জেরক্স (অ্যাটেস্টেড)।
- অন্তদয় কার্ড অথবা বিপিএল কার্ড (থাকলে)।
- কাউন্সিলর অথবা পঞ্চায়েত প্রধান দ্বারা জারি করা ইনকাম সার্টিফিকেট (আসল)।
- শেষ পরীক্ষার মার্কশীট।
- মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার মার্কশীট।
- মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিকের সার্টিফিকেট।
- বয়সের প্রমাণপত্র।
অনন্ত মেরিট স্কলারশিপ (Anant Merit Scholarship)-এ নির্বাচনের মানদন্ড :-
এই স্কলারশিপে আবেদন করলেই কিন্তু বৃত্তি পেয়ে যাবে না। তার জন্য নির্বাচনের মানদন্ড রয়েছে। ছাত্রীদের জন্য ৫০ শতাংশ আসন বরাদ্দ রয়েছে। এছাড়া শারীরিক প্রতিবন্ধী পড়ুয়ারা এক্ষেত্রে অগ্রাধিকার পাবে।
সবকিছু বিচার বিবেচনা করে অনন্ত ফাউন্ডেশন যোগ্য ছাত্র-ছাত্রীদের নাম বাছাই করবে। এরপর এই ফাউন্ডেশনের কল সেন্টার থেকে যোগ্য ছাত্রছাত্রীদের কাছে ফোন যাবে। তাদের ইন্টারভিউয়ের তারিখ বলে দেওয়া হবে। সেদিন নির্দিষ্ট ঠিকানায় উপস্থিত থাকতে হবে। সাথে অবশ্যই প্রতিটি ডকুমেন্টের অরিজিনাল ও ফটোকপি নিজের কাছে রাখতে হবে।
ইন্টারভিউতে সিলেক্ট হলে তখনই নির্বাচিত ছাত্র-ছাত্রীদের ব্যাংক একাউন্টের যাবতীয় তথ্য জমা নেওয়া হবে। আগেই বলেছি আবেদনকারী নিজস্ব ব্যাংক একাউন্ট থাকা দরকার। যদি না থাকে তাহলে সঙ্গে সঙ্গে নাম বাদ চলে যাবে। এরপর তোমাদের ব্যাংক একাউন্টে স্কলারশিপের টাকা প্রতি মাসে অনন্ত ফাউন্ডেশনের তরফ থেকে পাঠিয়ে দেওয়া হবে।
অনন্ত মেরিট স্কলারশিপ (Anant Merit Scholarship)-এ আবেদনের পদ্ধতি :-
অনলাইন আর অফলাইন উভয়ভাবেই এই স্কলারশিপ এর জন্য আবেদন করা যাবে।
অনন্ত মেরিট স্কলারশিপ (Anant Merit Scholarship)-এ আবেদনের অনলাইন পদ্ধতি –
সবার প্রথমে এই সংস্থার অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে লগইন করতে হবে। তারপর ফোন নম্বর ও নাম রেজিস্টার করতে হবে। এরপর ফরম ফিলাপ করে প্রয়োজনীয় সমস্ত ডকুমেন্ট স্ক্যান করে আপলোড করতে হবে। আর শেষে সাবমিট অপশনে ক্লিক করলেই আবেদন জমা পড়ে যাবে।
অনন্ত মেরিট স্কলারশিপ (Anant Merit Scholarship)-এ আবেদনের অফলাইন পদ্ধতি –
অফলাইনে আবেদন করার জন্য আবেদন পত্রটি অফিসিয়াল ওয়েবসাইট থেকে ডাউনলোড করতে হবে। এরপর সেটি প্রিন্ট আউট বের করে পূরণ করতে হবে। তারপর সমস্ত ডকুমেন্টের ফটোকপি সহ আবেদনপত্রটি অনন্ত ফাউন্ডেশনের ঠিকানায় পাঠিয়ে দিতে হবে।
ঠিকানাটি হলো – ANANT EDUCATION INITIATIVE, Infinity Think Tank, Tower II, 3rd Floor, Plot A3, Block GP, Sector V, Salt Lake, Kolkata – 700091
ফোন নম্বর – +91 33 40050410
ইমেইল – info@ananteducation.org
অনন্ত মেরিট স্কলারশিপের কিছু গুরুত্বপূর্ণ লিঙ্ক:
অনন্ত মেরিট স্কলারশিপ স্কিমের অফিসিয়াল ওয়েবসাইট লিঙ্ক
অনন্ত মেরিট স্কলারশিপের আবেদন পত্রের লিঙ্ক
উপসংহার :
অনন্ত মেরিট স্কলারশিপ (Anant Merit scholarship) মূলত মেধাবী অথচ আর্থিকভাবে দুর্বল ছাত্রছাত্রীদের উদ্দেশ্যে সাহায্য করার উদ্দেশ্যে চালু করা হয়। Anant Education Initiative কোম্পানি এই স্কলারশিপটি প্রদান করে থাকে এর মূল লক্ষ্য হল শিক্ষা হোক সবার অধিকার এই ভাবনাকে সামনে রেখে সমাজের প্রতিভাবান ছাত্র-ছাত্রীদের পাশে দাঁড়ানো। স্কলারশীপের প্রধান উদ্দেশ্য হল গ্রামীণ ও দরিদ্র পরিবার থেকে আসা ছাত্র-ছাত্রীদের জীবনে পরিবর্তন আনা অর্থাৎ শিক্ষার মাধ্যমে সমাজে ইতিবাচক পরিবর্তন আনা। উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে প্রতিবছর নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ প্রদান করে থাকে এই স্কলারশিপ।
এই স্কলারশিপ শুধুমাত্র একটি আর্থিক সহায়তা প্রকল্প নয় এটি হলো যারা প্রতিকূলতার মধ্যেও শিক্ষাকে ধরে রেখেছে তাদের জন্য এক অনুপ প্রেরণার উৎস। এই স্কলারশিপ হলো আমাদের দেশের প্রতিভার সাথে এবং স্বপ্ন পূরণের সেতু। আমাদের একান্ত কাম্য আগামী দিনে এই স্কলারশিপ সফলভাবে এগিয়ে যাক এবং এর মাধ্যমে আমাদের দেশের অর্থনৈতিকভাবে দুর্বল কিন্তু মেধাবী ছাত্র-ছাত্রীরা এইভাবেই উপকৃত হয়ে যাক।