Scholarships for West Bengal Students : আজকাল পড়াশোনার খরচ নেহাত কম নয়। সেই খরচ সামলাতে রীতিমতো হিমশিম খেয়ে যেতে হয় বাবা মায়েদের। পরিবারের বোঝা কমাতে তাই এগিয়ে আসতে হয় ছাত্র-ছাত্রীদেরই। তবে নিজের পড়াশোনা সামলে টাকা রোজগার করা খুবই মুশকিল। এ সময় মুশকিল আসান হয়ে আসে স্কলারশিপ।
পশ্চিমবঙ্গে এমন অনেক স্কলারশিপ রয়েছে যে সম্পর্কে ছাত্রছাত্রীরা জানেই না। আমার চেষ্টা করছি সেই সমস্ত স্কলারশিপের খবর তাদের কাছে পৌঁছানোর। আজকের প্রতিবেদনে আমরা পশ্চিমবঙ্গের বেশ কয়েকটি স্কলারশিপ এর সম্পর্কে কথা বলব।
দেখে নিন পশ্চিমবঙ্গের ছাত্রছাত্রীদের জন্য সমস্ত স্কলারশিপের তালিকা / List of Scholarships for West Bengal Students
১) প্রিয়ম্বদা বিরলা স্কলারশিপ (Priyamvada Birla Scholarship) :-
সম্প্রতি এম পি বিরলা চ্যারেটেবল ট্রাস্টের তরফ থেকে একটি নতুন স্কলারশিপ চালু করা হয়েছে। স্কলারশিপটির নাম হল- প্রিয়ম্বদা বিরলা স্কলারশিপ (Priyamvada Birla Scholarship)। এটি মূলত পশ্চিমবঙ্গের ছাত্রছাত্রীদের জন্য ডিজাইন করা হয়েছে। যে সমস্ত ছাত্র-ছাত্রীরা পড়াশোনায় ভালো কিন্তু আর্থিকভাবে পিছিয়ে থাকার কারণে পড়াশোনায় সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে, তারা এই স্কলারশিপের জন্য আবেদন করতে পারবে।
এই স্কলারশিপের দৌলতে তোমরা পড়াশোনা শিখে স্বাবলম্বী হতে পারবে। প্রিয়ম্বদা বিরলা স্কলারশিপ (Priyamvada Birla Scholarship)-এ আবেদন করলে ২৪ হাজার টাকা মতো বৃত্তি পাওয়া যাবে। যারা স্নাতক স্তরে ভর্তি হয়েছো বা ভর্তি হবে তারা এই স্কলারশিপের জন্য আবেদন করতে পারবে। আবেদনকারীকে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় সফলভাবে উত্তীর্ণ হতে হবে। উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করার পর তাকে যেকোনো স্নাতক স্তরে অর্থাৎ বি.এ, বি.এসসি, বি.কম, বিবিএ, বিসিএ, এলএলবি, বি.টেক, বিডিএস ও এমবিবিএস-এর মতো কোর্সে ভর্তি হতে হবে।
২) অনন্ত মেরিট স্কলারশিপ (Anant Merit Scholarship) :-
যেকোনো স্কলারশিপের নাম শুনলেই ছাত্র-ছাত্রীদের মাথায় প্রশ্ন আসে, এই স্কলারশিপটা আসলে কী? তোমাদের এই প্রশ্নের উত্তরই আমরা দেবো। নিম্নবিত্ত পরিবারের মেধাবী সন্তানদের পড়াশোনায় সাহায্য করার জন্য অনন্ত ফাউন্ডেশন অনন্ত মেরিট স্কলারশিপ (Anant Merit Scholarship)-এর সূচনা করে। এর দৌলতে ছাত্র-ছাত্রীরা প্রতিমাসে আর্থিক সহায়তা পাবে। পশ্চিমবঙ্গের ছাত্রছাত্রীরা ৬ হাজার টাকা মতো পেয়ে যাবে এই স্কলারশিপ থেকে।
এই স্কলারশিপের মাধ্যমে তোমরা কোনো চিন্তা ছাড়াই পড়াশোনা চালিয়ে যেতে পারবে। এই স্কলারশিপের সাহায্যে আবেদনকারী নিজের স্বপ্ন পূরণ করতে পারবে। চাইলে উচ্চশিক্ষা লাভ করতেও পারবে। যে সমস্ত ছাত্র-ছাত্রী স্কলারশিপে আবেদন করার জন্য যোগ্য হবে তারা নিশ্চিন্তে পড়াশোনা করে দিতে পারবে। এর পাশাপাশি চাইলে অন্য স্কলারশিপের জন্যেও তোমরা আবেদন করতে পারবে।
তবে তোমরা যেই ইনস্টিটিউটে পড়াশোনা করছো বা ভর্তি হবে তার কর্তৃপক্ষের ওপর নির্ভর করবে তোমরা একসাথে একাধিক স্কলারশিপে আবেদন করতে পারবে কিনা। তবে তোমাদের জানিয়ে রাখি এই স্কলারশিপে আবেদন করতে গেলে কিন্তু নিজস্ব ব্যাংক একাউন্ট থাকা দরকার। যদি এখনো নিজস্ব ব্যাংক একাউন্ট না থেকে থাকে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ব্যাংকে একাউন্ট খুলে ফেলো।
৩) পারম্পরিক স্কলারশিপ (Paramparik Scholarship) :-
পারম্পরিক স্কলারশিপ (Paramparik Scholarship) একটি জনপ্রিয় বৃত্তি প্রোগ্রাম। পারম্পরিক ফাউন্ডেশন পশ্চিমবঙ্গের মেধাবী ও যোগ্য ছাত্রদের এই স্কলারশিপ প্রদান করে থাকে। তারা যাতে কোনোরকম চিন্তা ছাড়াই নিজেদের স্বপ্ন পূরণ করতে পারে, তার জন্য এই স্কলারশিপটি ডিজাইন করা হয়েছে। স্কলারশিপের পরিমাণ নির্ভর করে ছাত্রের পরিবারের আর্থিক অবস্থা ও তার পড়াশোনার খরচের ওপর। পারম্পরিক ফাউন্ডেশন সাধারণত বেশিরভাগ খরচটাই বহন করার চেষ্টা করে থাকে।
তুমি যদি মাধ্যমিকে ৮০ শতাংশ মার্কস পেয়ে উত্তীর্ণ হয়ে একাদশ শ্রেণীতে ভর্তি হয়ে থাকো তাহলে নির্দ্বিধায় এই স্কলারশিপের জন্য আবেদন করতে পারো। এছাড়া স্নাতক ও স্নাতকোত্তর স্তরে ভর্তি হলেও এই স্কলারশিপের জন্য আবেদন করা যাবে। যেকোনো ডিগ্রি অথবা পেশাগত কোর্সে ভর্তি হলেই পারম্পরিক স্কলারশিপ (Paramparik Scholarship)-এ আবেদন করা যাবে।
৪) জগদীশচন্দ্র বোস স্কলারশিপ (Jagadish Chandra Bose Scholarship) :-
এই স্কলারশিপ পশ্চিমবঙ্গের দশম ও দ্বাদশ শ্রেণীর ছাত্র-ছাত্রীদের দেওয়া হয়ে থাকে। যারা বিজ্ঞান বিভাগে পড়তে ইচ্ছুক এই স্কলারশিপ বিশেষভাবে তাদের জন্য ডিজাইন করা হয়েছে। এটি জুনিয়র ও সিনিয়র দুই ভাগে বিভক্ত। এই স্কলারশিপ পেতে গেলে আবেদনকারীদের বেশ কয়েকটি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে হবে। নির্বাচিত হলে তবেই মিলবে আর্থিক সুবিধা।
যারা মাধ্যমিকের পর বিজ্ঞান বিভাগে পড়তে চায় তারা এই স্কলারশিপের জন্য আবেদন করতে পারবে। আবার উচ্চ মাধ্যমিকের পর বিজ্ঞান নিয়ে স্নাতক স্তরে ভর্তি হলেও এই স্কলারশিপের জন্য আবেদন করা যাবে। আমরা আগেই বলেছি এই স্কলারশিপটি দুটি ভাগে বিভক্ত। একটি হলো, JBNSTS বিজ্ঞানী কন্যা মেধা স্কলারশিপ (জুনিয়র) আর দ্বিতীয়টি হলো, JBNSTS বিজ্ঞানী কন্যা মেধা স্কলারশিপ (সিনিয়র)।
৫) হিন্দি স্কলারশিপ স্কিম (Hindi Scholarship Scheme) :-
পশ্চিমবঙ্গের রাজ্য সরকার একটি নতুন স্কলারশিপ নিয়ে এসেছে। তার নাম হলো- হিন্দি স্কলারশিপ স্কিম (Hindi Scholarship Scheme)। এই স্কলারশিপের মাধ্যমে যারা বর্তমানে প্রফেশনাল কোর্সে ভর্তি হয়েছে বা প্রফেশনাল করছে ভর্তি হতে চাইছে তারা আর্থিকভাবে সহায়তা পাবে। এটি মূলত সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য ডিজাইন করা হয়েছে। এই স্কলারশিপের মাধ্যমে তারা উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করতে পারবে। তোমরা আবেদনপত্র ফিল আপের মাধ্যমে এই স্কলারশিপের জন্য আবেদন করতে পারবে। তবে তার জন্য অবশ্যই নির্দিষ্ট শর্তাবলী পূরণ করতে হবে। এই স্কলারশিপ কেবলমাত্র তাদেরই দেওয়া হবে যাদের মাতৃভাষা হিন্দি নয়।
এই স্কলারশিপ মূলত তিনটি ভাগে বিভক্ত। যথা- উচ্চ মাধ্যমিক স্তর, স্নাতক স্তর আর স্নাতকোত্তর অথবা রিসার্চ স্তর। মোট ২৩৯ জন ছাত্র-ছাত্রীকে এই স্কলারশিপের সুবিধা প্রদান করা হয়ে থাকে। উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে সবথেকে বেশি সংখ্যক ছাত্র-ছাত্রী এই সুবিধা পায়। এই স্তরে ১৪৩ জনকে হিন্দি স্কলারশিপ স্কিম (Hindi Scholarship Scheme) দেওয়া হয়। স্নাতক স্তরে ৭২ জন আর স্নাতকোত্তর স্তরে ২৪ জন ছাত্র-ছাত্রী স্কলারশিপ পেয়ে থাকে।
৬) ঐক্যশ্রী প্রকল্প (Aikyashree Scholarship) :-
রাজ্য সরকার মেধাবী পড়ুয়াদের জন্য বিভিন্ন স্কলারশিপ চালু করেছে। সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য চালু করা হয়েছে ঐক্যশ্রী প্রকল্প (Aikyashree Scholarship)। ঐক্যশ্রী স্কলারশিপে আবেদন করলে 1 হাজার টাকা স্কলারশিপ পাওয়া যায়। এই স্কলারশিপ প্রথম শ্রেণী থেকে শুরু করে কলেজ পড়ুয়া ছাত্র-ছাত্রীরা পেয়ে থাকে। এমনকি বিভিন্ন কোর্সে ভর্তি হওয়া পড়ুয়ারাও এই স্কলারশিপের সুবিধা পেয়ে থাকে।
পশ্চিমবঙ্গের প্রায় ২১ শতাংশ পরিবার দরিদ্র সীমার নিচে বসবাস করে। আর ভারতবর্ষের মোট জনসংখ্যার প্রায় ১৬.৪ শতাংশ পরিবার দরিদ্র সীমার নিচে বসবাস করে। এইসব পরিবারের কাছে পড়াশোনা এক অলীক স্বপ্ন। এমন পরিবারগুলিতে মেধাবী সন্তান থাকা সত্ত্বেও টাকা পয়সার অভাবে উচ্চশিক্ষা লাভের স্বপ্ন তারা পূরণ করতে পারে না।
তাদের কথা ভেবেই রাজ্য সরকার একাধিক স্কলারশিপের সুবিধা দিয়ে থাকেন। এই স্কলারশিপগুলি নির্ভর করে মেধা, জাতি ও পরিবারের আয় সহ বিভিন্ন বিষয়ের ওপর। ঐক্যশ্রী প্রকল্প পশ্চিমবঙ্গের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মেধাবী ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য বিশেষভাবে ডিজাইন করা হয়েছে।
৭) বিজ্ঞানী কন্যা মেধা বৃত্তি স্কলারশিপ (Bigyani Kanya Medha Britti Scholarship) :-
মাধ্যমিকের পর পশ্চিমবঙ্গের ছাত্রীদের বিভাগ বেছে নিতে হয়। উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের ছাত্রীদের বিজ্ঞান বিভাগে উৎসাহিত করার লক্ষ্যে এই স্কলারশিপের সূচনা করেছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি। এটি জগদীশ বোস ন্যাশনাল সাইন্স ট্যালেন্ট সার্চ কলকাতা ফাউন্ডেশন-এর মাধ্যমে কার্যকর করা হয়েছে।
এর মাধ্যমে পশ্চিমবঙ্গের আর্থিকভাবে পিছিয়ে পড়া পরিবারের কন্যা সন্তানেরা বিজ্ঞান বিভাগে পড়ার জন্য প্রয়োজনীয় আর্থিক সহায়তা পেয়ে থাকে। এর মাধ্যমে ল্যাপটপ পাওয়ার সুযোগও রয়েছে।
কলকাতার জগদীশচন্দ্র বোস ন্যাশনাল সাইন্স ট্যালেন্ট সার্চ ফাউন্ডেশন জানিয়েছে, জুনিয়র বিজ্ঞান কন্যা মেধা বৃত্তির আওতায় আবেদন জানানোর জন্য ১০০ টাকা ফি হিসেবে জমা করতে হবে। অপরদিকে সিনিয়র বিজ্ঞান কন্যা মেধা বৃত্তির আওতায় আবেদনকারীকে আবেদন ফি হিসেবে ২০০ টাকা জমা করতে হবে।
৮) আলো স্কলারশিপ (Aalo Scholarship) :-
আলো স্কলারশিপ আলো চ্যারিটি অর্গানাইজেশনের তরফ থেকে চালু করা হয়েছে। যে সমস্ত মেধাবী ছাত্র-ছাত্রীরা আর্থিক কারণে উচ্চশিক্ষার সুবিধা থেকে বঞ্চিত থাকতে বাধ্য হচ্ছে, তারা এই স্কলারশিপে আবেদন করতে পারবে। যোগ্য ছাত্র-ছাত্রীরা যাতে নিজেদের স্বপ্ন পূরণ করতে পারে সেই কারণে তাদের এই স্কলারশিপ প্রদান করা হয়ে থাকে।
উচ্চশিক্ষা লাভ করার জন্য আর্থিক জোর থাকা ভীষণ দরকার। কিন্তু সবার সেই জোর থাকে না। এই স্কলারশিপের মাধ্যমে যোগ্য শিক্ষার্থীদের ক্ষমতায়ন করা হয়। এই স্কলারশিপে আবেদন করলে শিক্ষার্থীরা বছরে প্রায় ৭ হাজার ২০০ টাকা করে বৃত্তি পাবে।
৯) ওয়েসিস স্কলারশিপ (OASIS Scholarship) :-
আর্থিক অনটনের জেড়ে বহু ছাত্রছাত্রী ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও উচ্চমাধ্যমিকের পর পড়াশোনা করতে পারে না, নিজের পছন্দমতো বিষয় নিয়ে পড়তে পারে না। আর্থিক অনটন যাতে মেধাবী ছাত্র-ছাত্রীদের পড়াশোনার পথে বাধা হয়ে না দাঁড়ায় তাই পশ্চিমবঙ্গ সরকার অর্থনৈতিক ভাবে দুর্বল শ্রেণীর পরিবারগুলির জন্য নিয়ে এসেছে এই ওয়েসিস স্কলারশিপ (OASIS Scholarship)। এটি মেরিটের ওপর নির্ভর করে না। আর্থিক ভাবে পিছিয়ে পড়া শ্রেণীর যেকোনো ছাত্রছাত্রী এতে আবেদন করতে পারবে।
তোমরা নবম শ্রেণী থেকে এই স্কলারশিপে আবেদন করতে পারবে। এছাড়া স্নাতকোত্তর স্তরে যদি মেডিকেল, হোটেল ম্যানেজমেন্ট, নার্সিং, ইঞ্জিনিয়ারিং, পলিটেকনিক, আইন, বি.এ, বি.এসসি ও বি.কম ইত্যাদি বিষয়ে ভর্তি হলে স্কলারশিপে আবেদন করা যাবে। হোস্টেলের ছাত্রছাত্রীরা তুলনামূলক বেশি স্কলারশিপ পাবে।
এই স্কলারশিপের ক্ষেত্রে রাজ্য সরকার ও কেন্দ্র সরকার উভয়েই অর্থ প্রদান করে থাকে। ৬০% অনুদান রাজ্য সরকার আর ৪০% অনুদান কেন্দ্র সরকার দিয়ে থাকে। ভিন্ন ভিন্ন শ্রেণী ও বিষয়ের ওপর নির্ভর করে স্কলারশিপের পরিমাণ।
১০) জিপি বিড়লা স্কলারশিপ (GP Birla Scholarship) :-
পশ্চিমবঙ্গের যে সমস্ত মেধাবী ছাত্র-ছাত্রী অর্থের অভাবে উচ্চশিক্ষা লাভের পথে সমস্যায় পড়েছে তাদের জন্য একদম পারফেক্ট হলো জিপি বিড়লা স্কলারশিপ। এর সব থেকে বড় সুবিধা হল এই স্কলারশিপের পাশাপাশি তোমরা অন্য স্কলারশিপে আবেদন করতে পারবে। আর দুটি স্কলারশিপ একসাথেই নিতে পারবে। স্নাতক ডিগ্রি করছে ভর্তি হওয়ার ইচ্ছে থাকলে অবশ্যই এই স্কলারশিপে আবেদন করো।
শুধুমাত্র উচ্চমাধ্যমিক নয় মাধ্যমিক পাস করলেও এই স্কলারশিপে আবেদন করা যাবে। আবেদন মঞ্জুর হলে নগদ ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত স্কলারশিপ পাওয়ার সুযোগ রয়েছে। স্কলারশিপের সাহায্যে তোমরা নিজেদের উচ্চশিক্ষা লাভের স্বপ্ন পূরণ করতে পারবে।
১১) নবান্ন স্কলারশিপ (Nabanna Scholarship) :-:
পশ্চিমবঙ্গের মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির উদ্যোগে চালু হয়েছে এই নবান্ন স্কলারশিপ (Nabanna Scholarship)। নিম্নবিত্ত, মধ্যবিত্ত ও আর্থিকভাবে পিছিয়ে পড়া শ্রেণীর ছাত্র-ছাত্রীরা যাতে টাকা পয়সার অভাবে মাঝপথেই পড়াশোনা থেকে বঞ্চিত না হয় তাই এই স্কলারশিপের সূচনা। নবান্ন স্কলারশিপই হল পশ্চিমবঙ্গ ত্রান তহবিল স্কলারশিপ বা চিফ মিনিস্টার রিলিফ ফান্ড স্কলারশিপ।
মাধ্যমিক পরীক্ষার রেজাল্ট বের হওয়ার পরেই এই স্কলারশিপে আবেদন করা যায়। তবে তার জন্য আবেদনকারীকে অবশ্যই একাদশ শ্রেণীতে কোন সরকারি সাহায্যপ্রাপ্ত অথবা সরকারি স্কুলে ভর্তি হতে হবে। এছাড়া দ্বাদশ শ্রেণি, স্নাতক স্তর, স্নাতকোত্তর স্তরের শিক্ষার্থীরাও এই স্কলারশিপের জন্য আবেদন করতে পারবে।
বিভিন্ন কোর্স ও স্তরের উপর এই স্কলারশিপের আর্থিক অনুদানের পরিমাণ নির্ভর করে। তবে সাধারণত প্রতিবছর ১০ হাজার টাকা করে আর্থিক অনুদান পেয়ে থাকে ছাত্র-ছাত্রীরা। খুব বেশি মার্কসের প্রয়োজন হয় না বলে বেশিরভাগ ছাত্রছাত্রী এই স্কলারশিপে (Nabanna Scholarship) আবেদন করতে পারে।
১২) স্বামী বিবেকানন্দ স্কলারশিপ (Swami Vivekanand merit Cummins Scholarship) :-
পশ্চিমবঙ্গের মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির উদ্যোগে চালু হয়েছে এই স্বামী বিবেকানন্দ স্কলারশিপ। নিম্নবিত্ত, মধ্যবিত্ত ও আর্থিকভাবে পিছিয়ে পড়া শ্রেণীর ছাত্র-ছাত্রীরা যাতে টাকা পয়সার অভাবে মাঝপথেই পড়াশোনা থেকে বঞ্চিত না হয় তাই এই স্কলারশিপের সূচনা। স্বামী বিবেকানন্দ স্কলারশিপই হল বিকাশ ভবন স্কলারশিপ।
এই স্কলারশিপে আবেদন করার জন্য আবেদনকারীকে ন্যূনতম ৬০ শতাংশ মার্কস পেতে হবে। এর থেকে কম মার্কস পেলে স্বামী বিবেকানন্দ স্কলারশিপে আবেদন করা যাবে না।
আবেদনকারী পড়ুয়ার পরিবারের বার্ষিক আয় ২ লাখ ৫০ হাজার টাকার মধ্যে হতে হবে। এর বেশি হলে সেই পড়ুয়া স্বামী বিবেকানন্দ স্কলারশিপে আবেদন করতে পারবে না। মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের ছাত্র-ছাত্রীরা এই স্কলারশিপ থেকে বছরে ১২ হাজার টাকা বৃত্তি পেয়ে থাকে। বি.এ আর বি.কম বিভাগের ছাত্র-ছাত্রীরাও বছরে ১২ হাজার টাকায় বৃত্তি পায়।
১৩) ন্যাশনাল স্কলারশিপ পোর্টাল বৃত্তি (National Scholarship Portal) :-
এই স্কলারশিপ-কে অনেকে মেরিট কাম মিনস নামেও চিনে থাকবে। এই স্কলারশিপের মাধ্যমে সংখ্যালঘু ছাত্রছাত্রীদের শিক্ষালাভের জন্য আর্থিক সহায়তা প্রদান করা হয়। তবে এটি তাদের পরিবারের আয় ও তাদের যোগ্যতার ওপর নির্ভর করে। এই বৃত্তি পেতে গেলে যোগ্যতার মানদণ্ডে উত্তীর্ণ হতে হবে। এই স্কলারশিপ সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর ছাত্র-ছাত্রীদের দেওয়া হয়ে থাকে।
এই স্কলারশিপের জন্য যোগ্য প্রার্থীরা পুরস্কারের জন্য আবেদন করতে পারে। ১৯৯২ সালের সংখ্যালঘু জাতীয় আইন কমিশন অনুযায়ী, শিখ, খ্রিস্টান, জৈন, বৌদ্ধ, মুসলিম ও পার্সি জনগোষ্ঠীর মানুষেরা সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের অন্তর্ভুক্ত। ভারতের প্রতিটি রাজ্যে ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে বসবাসকারী সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের দরিদ্র ও মেধাবী ছাত্র-ছাত্রীরা এই স্কলারশিপের জন্য আবেদন করতে পারে।
১৪) কন্যাশ্রী প্রকল্প (Kanyashree Prakalpa) :-
পশ্চিমবঙ্গে এই মুহূর্তে সবথেকে জনপ্রিয় প্রকল্প হলো কন্যাশ্রী। ২০১৩ সালে মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির কল্যাণে এই প্রকল্পের সূচনা হয়। ১৩ বছর বয়স থেকে ১৮ বছর বয়স পর্যন্ত এই প্রকল্পে আবেদন করা যাবে। আবেদন করলে মিলবে প্রতিবছর ১ হাজার টাকা করে। তবে এর জন্য আবেদনকারীর নিজস্ব ব্যাংক একাউন্ট থাকতে হবে। আর ১৮ বছর পর এককালীন ২৫ হাজার টাকা দেবে সরকার।
১৫) শিক্ষাশ্রী প্রকল্প (Sikkhashree Prakalpa) :-
তপশিলি জাতি ও উপজাতি সম্প্রদায়ের পঞ্চম থেকে অষ্টম শ্রেণীর ছাত্র-ছাত্রীদের শিক্ষাশ্রী প্রকল্পের মাধ্যমে আর্থিক সহায়তা প্রদান করা হয়ে থাকে। এই প্রকল্পের সূচনা ২০১৪ সালে হয়েছে।
১) সীতারাম জিন্দাল স্কলারশিপ (Sitaram Jindal Scholarship) :-
সীতারাম জিন্দাল স্কলারশিপ একটি মেরিট কাম মিন্স স্কলারশিপ। এটি ব্যাঙ্গালোরের সীতারাম জিন্দাল ফাউন্ডেশন দ্বারা পরিচালিত। এই স্কলারশিপ আর্থিকভাবে পিছিয়ে পড়া পরিবারের থেকে আসা মেধাবী পড়ুয়াদের দেওয়া হয়ে থাকে। একাদশ শ্রেণী থেকে স্নাতকোত্তর স্তর পর্যন্ত এই স্কলারশিপ দেওয়া হয়ে থাকে। এছাড়া টেকনিক্যাল বিভাগের পলিটেকনিক ও ডিপ্লোমা স্তরেও সীতারাম জিন্দাল স্কলারশিপ দেওয়া হয়। আবেদনকারী পড়ুয়া যোগ্য বলে বিবেচিত হলে প্রতি মাসে ৩ হাজার ২০০ টাকা করে আর্থিক অনুদান পেয়ে যাবে।
17) কে.সি মাহিন্দ্রা স্কলারশিপ (KC Mahindra Scholarship) :-
প্রতি বছর আর্থিকভাবে পিছিয়ে পড়া মেধাবী ছাত্র-ছাত্রীদের কে.সি মাহিন্দ্রা স্কলারশিপ দেওয়া হয়ে থাকে। যারা বিদেশে পড়াশোনা করতে যেতে চাইছো কিন্তু অতিরিক্ত খরচের ভয়ে পারছো না। তারা এই স্কলারশিপের জন্য আবেদন করতে পারো। কে.সি মাহিন্দ্রা স্কলারশিপ ইন্টারেস্ট ছাড়া লোন দিয়ে থাকে। এই স্কলারশিপে আবেদন করার জন্য অবশ্যই তোমাদের বিদেশে পোস্ট গ্র্যাজুয়েট পড়ার জন্য এপ্লাই করতে হবে। 2025 শিক্ষাবর্ষে কে.সি মাহিন্দ্রা স্কলারশিপে আবেদন জুলাই-আগস্ট নাগাদ শুরু হতে পারে।
18) সাহু জৈন ট্রাস্ট স্কলারশিপ (Sahu Jain Trust Scholarship) :-
সাহু জৈন ট্রাস্ট ফাউন্ডেশন আর্থিকভাবে পিছিয়ে পড়া পরিবারের শিক্ষার্থীদের জন্য চালু করেছে সাহু জৈন ট্রাস্ট স্কলারশিপ। ভারতে বহু মেধাবী ও যোগ্য ছাত্র-ছাত্রী রয়েছে। কিন্তু অর্থের অভাবে তারা সঠিক প্রশিক্ষণ গ্রহণ করতে পারে না। বহু শিক্ষার্থীকে মাঝপথে পড়াশোনা ছেড়ে দিয়ে কাজের খোঁজে চলে যেতে হয়।
যা সুদূর ভবিষ্যতে কখনওই কাম্য নয়। যারা ম্যানেজমেন্ট, ইঞ্জিনিয়ারিং ও মেডিকেলের মতো পেশাদারী বিভাগে পড়াশোনা করতে চায় তাদের জন্য এই স্কলারশিপটি নিয়ে আসা হয়েছে। এই ধরনের পড়াশোনা প্রচুর টাকার দরকার পরে। মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্ত পরিবারের পক্ষে এত টাকা খরচ করা সম্ভব নয়। সেক্ষেত্রে তোমরা চাইলে সাহু জৈন ট্রাস্ট স্কলারশিপে আবেদন করতে পারো। স্নাতক ও স্নাতকোত্তর স্তরে এই স্কলারশিপ দেওয়া হয়ে থাকে। মূলত উচ্চ শিক্ষার প্রসার ঘটাতে ছাত্র ছাত্রীদের আর্থিক সহায়তা প্রদান করা হয়ে থাকে এই স্কলারশিপের মাধ্যমে।
এই স্কলারশিপের সুবিধা কিন্তু সবাই পায়না। কর্তৃপক্ষ যথেষ্ট বিচার বিবেচনা করে এই স্কলারশিপ যোগ্য প্রার্থীদের দিয়ে থাকে। তার জন্য যোগ্যতার মানদন্ড রয়েছে। প্রার্থীদের শিক্ষাগত যোগ্যতা অর্থাৎ মার্কস অবশ্যই ভালো হওয়া দরকার। তার পাশাপাশি পরিবারের আর্থিক দিকটিও বিচার করা হয়। আবেদনকারী প্রার্থী যোগ্য বলে নির্বাচিত হলে তার কাছে ইমেইল বা ফোন কলের মাধ্যমে নোটিফিকেশন পৌঁছে যায়। তাই আমরা বারবার বলি আবেদন করার সময় বৈধ ফোন নম্বর ও ইমেইল আইডি নথিভুক্ত করবেন। এই স্কলারশিপের টাকা প্রার্থীর নির্দিষ্ট ব্যাংক একাউন্টে পাঠানো হয়।
এই স্কলারশিপে আবেদন করলে নির্বাচিত প্রার্থী ২ হাজার ৫০০ টাকা থেকে ২৫ হাজার টাকা মতো বৃত্তি পেয়ে থাকে। আর এটি প্রতিবছর দেওয়া হয়। বৃত্তির পরিমাণ নির্ভর করে প্রার্থী কোন্ কোর্সে ভর্তি হয়েছে তার ওপর। কোর্স ফি যত বেশি তত বেশি বৃত্তি দেওয়া হয়ে থাকে। প্রতিবছর রিনিউয়াল করার সুযোগ থাকে।
19) কোটাক কন্যা স্কলারশিপ (Kotak Kanya Scholarship) :-
পড়াশোনা শুধুমাত্র জ্ঞান আহরণ বা জ্ঞান বৃদ্ধির জন্য করা হয় না। পড়াশোনা একটা মেয়েকে স্বাবলম্বী করে তুলতে সহায়তা করে। পেশাদারী শিক্ষায় শিক্ষিত হলে একজন মেধাবী ছাত্রী হয়ে উঠতে পারে স্বাধীন নারী। কিন্তু নিম্ন আয়ের পরিবারে পেশাদারী শিক্ষার যে খরচ তা বহন করা খুবই কষ্টদায়ক। কিন্তু এই ধরনের পড়াশোনা ভবিষ্যতে চাকরি পেতে অনেক সহায়তা করে। কোটাক কন্যা স্কলারশিপ (KOTAK KANYA SCHOLARSHIP)-এর মাধ্যমে অর্থনৈতিকভাবে পিছিয়ে পড়া পরিবারের কন্যা সন্তান পেশাদারী তথা কারিগরি শিক্ষা লাভ করার জন্য আর্থিক সহায়তা পেতে পারবে। তবে তার জন্য তাকে অবশ্যই মেধাবী হতে হবে। পাশাপাশি তাকে ভর্তি হতে হবে কোনো পেশাদারী কোর্সে। দ্বাদশ শ্রেণীর উত্তীর্ণ হওয়ার পরে পেশাদারী কোর্সে ভর্তি হলে এই স্কলারশিপে আবেদন করা যাবে। এই স্কলারশিপ মেয়েদের জন্য ডিজাইন করা হয়েছে।
দ্বাদশ শ্রেণী উত্তীর্ণ হওয়ার পর কোনো মেয়ে যদি বি.ফার্মেসি, আর্কিটেকচার, ডিজাইন, ইন্টিগ্রেটেড এলএলবি, ইঞ্জিনিয়ারিং, এমবিবিএস, বি.এসসি, বিএস গবেষণা, বিএস এমএস, নার্সিং, বিডিএস ইত্যাদির মতো কোনো পেশাদারী কোর্সে ভর্তি হয়, তাহলে কোটাক কন্যা স্কলারশিপ (KOTAK KANYA SCHOLARSHIP)-এ আবেদন করতে পারবে।
কোটাক কন্যা স্কলারশিপ (KOTAK KANYA SCHOLARSHIP) কেবলমাত্র প্রফেশনাল ডিগ্রি কোর্সে ভর্তি হলেই আবেদন করা যাবে। এই স্কলারশিপে আবেদন করলে কোর্স শেষ না হওয়া পর্যন্ত প্রতিবছর আর্থিক সহায়তা দেওয়া হবে। এই স্কলারশিপের দৌলতে মেধাবী ছাত্রীর প্রতিবছর ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত বৃত্তি পেয়ে যাবে।
২০) স্বামী দয়ানন্দ সরস্বতী মেরিট কাম মিন্স স্কলারশিপ (Swami Dayanand Saraswati Merit Cummins Scholarship) :-
এস ডি ই এফ স্কলারশিপ ২০১৫ সাল থেকে আইআইটির ছাত্র-ছাত্রীদের স্কলারশিপ দেওয়া শুরু করে। তবে এখন শুধুমাত্র আইআইটির ছাত্র-ছাত্রীদের না পাশাপাশি অন্যান্য কোর্সের গ্রাজুয়েশনের ছাত্র-ছাত্রীদেরও এই স্কলারশিপ দেওয়া হয়।
এই স্কলারশিপ ইঞ্জিনিয়ারিং, মেডিকেল, আর্কিটেকচার সহ অন্যান্য আন্ডারগ্রাজুয়েট কোর্সের পড়ুয়ারা আবেদন করতে পারবে। আবেদন করার জন্য দ্বাদশ শ্রেণীতে ন্যূনতম ৭৫ শতাংশ মার্কস অথবা ৭.৫ সিজিপিএ লাগবে। আবেদনকারীর পরিবারের বার্ষিক আয় ৬ লাখ টাকার বেশি হওয়া যাবে না।